বাগাতিপাড়ায় পাখা পল্লীর অর্ধশত পরিবারের দিন কাটছে অর্ধাহারে-অনাহারে


নাটোরের বাগাতিপাড়ায় করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এর প্রভাবে তালপাখা পল্লীর অর্ধশত পরিবারের দিন কাটছে অর্ধাহারে-অনাহারে। তৈরি পাখা বিক্রি করতে না পারায় তারা পড়েছেন চরম আর্থিক সংকটে। আবার বিভিন্ন এনজিও’র ঋণের চাপে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অনেকে।
জানা যায়, উপজেলার জামনগর ইউনিয়নে সবুজ বৃক্ষরাজির সুশীতল ছাঁয়ায় ঘেরা হাপানিয়া গ্রাম যা অনেকের কাছে তালপাখা পল্লী নামেও পরিচিত। এখানকার অর্ধশত পরিবার পৈত্রিক ব্যবসাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তাল গাছের পাতা থেকে তৈরি হাত পাখার শীতল বাতাসে অনেকেই ক্লান্ত মনকে শান্ত করে থাকেন।
বিদ্যুৎ শূন্য পরিবারে হাত পাখা হয়ে উঠে পরম বন্ধু। এছাড়া প্রচন্ড তাবদাহ, ভ্যাপসা গরম ও বিদ্যুতের লোডশেডিং বেশি হলে হাতপাখার কদর বাড়ে। এখান থেকে প্রতি গ্রীষ্ম মৌসুমে ৩ লাখের অধিক পাখা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। ব্যবসায়ী ও কারিগরদের সংসার চলে স্বাচ্ছন্দ্যে।
কিন্তু মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বিপাকে এ পল্লীর মানুষ। লকডাউনে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় তারা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন। আরও জানা যায়, পাখা তৈরির উপকরন এই এলাকায় না পাওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলা থেকে ছোট তাল গাছের পাতা সংগ্রহ করে নিয়ে আসতে হয়।
তারপর সেগুলোকে রোদে শুকিয়ে পানিতে কিছুদিন ডুবিয়ে রাখতে হয়। এরপর এই ভেজা পাতা গোলাকার করে কেটে দুইখন্ড করা হয়। প্রতিটি পাতা থেকে দুইটি পাখা তৈরি হয়। আর পাতা সংগ্রহ থেকে তৈরি পর্যন্ত প্রতিটি পাখায় খরচ হয় ১০ থেকে ১১ টাকা। আর এই তৈরি পাখা পাইকারদের নিকট বিক্রয় করা হয় ১৪ থেকে ১৫ টাকায়।
পাখা শিল্পের কারিগর শফিকুল ইসলাম জানান, তাল পাখা পল্লীর প্রতিটি বাড়ির আঙ্গিনায় রোদে ছড়ানো-ছিটানো রয়েছে পাখা তৈরির নানা উপকরণ। নারী-পুরুষ উভয়েই এই পাখা তৈরির কাজ করেন তারা। পুরুষরা উপকরণ সংগ্রহ ও কাঠামো তৈরি করে থাকেন, আর মেয়েরা নিপূণ হাতে করেন পাখার কারুকার্য। আর এই পাখা বিক্রয় করে চলে তাদের সংসার। কিন্তু এবার কোভিড-১৯ এর কারণে লকডাউনে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় তৈরি হাত পাখার সিংহ ভাগই বিক্রয় করতে পারেননি। ফলে পরিবার নিয়ে দিন কাটছে অর্ধাহারে-অনাহারে। এবং বছরের বাকি দিনগুলো কি ভাবে কাটবে তা ভেবে পাচ্ছেননা।
আর এক পাখা শিল্পী হুনুফা বেগম জানান, তিনি সাংসারিক কাজের ফাঁকে হাত পাখার কারুকার্য করেন। ১শ’ পাখা সেলাই ও রঙ করলে মজুরি পান ৬০ টাকা। বর্তমানে করোনা ভাইরাসের কারণে সেই কাজ না থাকায় আর্থিক কষ্টে রয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াংকা দেবী পাল বলেন, করোনা কালে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও ইউপি চেয়ারম্যান বিভিন্ন সময় তাদের সাহায্য সহযোগিতা করে যাচ্ছে।