৭২,৭৫০ কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর


করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশের অর্থনীতির উপর বিরূপ প্রভাব উত্তরণের জন্য ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনার প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ রবিবার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই প্যাকেজ ঘোষণা করেন তিনি। এতে করোনার সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরার পাশাপাশি প্রাণঘাতী করোনা মোকাবেলায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরছেন প্রধানমন্ত্রী।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশের শিল্প উৎপাদন, রপ্তানি, সেবা খাত ও শেয়ারবাজারে বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনার কারণে দেশের আমদানি ব্যয় ও রপ্তানি আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।’
সারা পৃথিবীতে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব উত্তরণে আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ ও সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধিসহ ৪টি কার্যক্রম নিয়ে কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তা হলো তাৎক্ষণিক, স্বল্প এবং দীর্ঘ-মেয়াদী এ তিন পর্যায়ে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ৪টি কার্যক্রম নিয়ে এ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ৪টি কার্যক্রম হলো-
১. সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করা: সরকরি ব্যয়ের ক্ষেত্রে ‘কর্মসৃজনকে’ মূলত প্রাধান্য দেওয়া হবে। বিদেশ ভ্রমণ এবং বিলাসী ব্যয় নিরুৎসাহিত করা হবে। আমাদের ঋণের স্থিতি-জিডিপি’র অনুপাত অত্যন্ত কম (৩৪%) বিধায় অধিকতর সরকারি ব্যয় সামষ্টিক অর্থনীতির উপর কোনও চাপ সৃষ্টি করবে না।
২. আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ: ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে কতিপয় ঋণ সুবিধা প্রবর্তন করা হবে। অর্থনৈতিক কর্মকা- পুনরুজ্জীবিত করা, শ্রমিক-কর্মচারীদের কাজে বহাল রাখা এবং উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অক্ষুন্ন রাখাই হলো আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের মূল উদ্দেশ্য।
৩. সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি: দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী জনগণ, দিনমজুর এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত জনসাধারণের মৌলিক চাহিদা পূরণে বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি করা হবে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমসমূহ হলো:
(ক). বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ
(খ). ১০ টাকা কেজি দরে চাউল বিক্রয়;
(গ). লক্ষ্যভিত্তিক জনগোষ্ঠির মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ;
(ঘ). ‘বয়স্ক ভাতা’ এবং ‘বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাদের জন্য ভাতা’ কর্মসূচির আওতা সর্বাধিক দারিদ্র্যপ্রবণ ১০০টি উপজেলায় শতভাগে উন্নীত করা; এবং
(ঙ). জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহীত অন্যতম কার্যক্রম গৃহহীন মানুষদের জন্য গৃহ নির্মাণ কর্মসূচি দ্রুত বাস্তবায়ন করা; ইত্যাদি।
৪. মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা: অর্থনীতির বিরূপ প্রভাব উত্তরণে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে সিআরআর এবং রেপোর হার কমিয়ে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যা আগামীতেও প্রয়োজন অনুযায়ী অব্যাহত থাকবে। তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য থাকবে যেন মুদ্রা সরবরাহজনিত কারণে মুদ্রাস্ফীতি না ঘটে।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে যারা মারা গেছেন তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে শেখ হাসিনা বলেন, একটি মৃত্যুও আমাদের কাম্য নয়। করোনায় আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন প্রধানমন্ত্রী তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। শেখ হাসিনা বলেন, করোনায় বাংলাদেশে গতকাল পর্যন্ত মোট আটজনের মৃত্যু হয়েছে। একটি মৃত্যুর আমাদের কাম্য নয়।