বিডিআর হত্যায় : ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল

অালোকিত প্রজন্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭:৪৪ পিএম, সোমবার, ২৭ নভেম্বর ২০১৭ | ৭৭০

২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন বিডিআরের (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তর পিলখানায় নারকীয় হত্যাযজ্ঞ মামলায় ২০১৩ সালে নিম্ন আদালতের দেওয়া রায়ের কিছু অংশ বহাল রেখে ডিএডি তৌহিদসহ ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণা করেন। 

এর আগে ২০১৩ সালে এই মামলায় ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন নিম্ন আদালত। 

আজ সোমবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে দেশের সবচেয়ে আলোচিত এ মামলায় ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে অনুমতি চেয়ে আবেদন) ও আপিলের রায় পড়া শুরু করেন বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ (বৃহত্তর) হাইকোর্ট বেঞ্চ। বেঞ্চের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার।

রায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ১৫২ জনের মধ্যে ১৩৯ জনের সাজা বহাল রাখা হয়। এ ছাড়া চারজনকে খালাস দেন উচ্চ আদালত। নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আটজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও দেওয়া হয়। তবে এদের মধ্যে এক আসামি মারা যাওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। 

গত ১২ নভেম্বর থেকে হাইকোর্টের কার্যতালিকায় ২৬ নভেম্বর রায় ঘোষণার জন্য রাখা হয় আপিল মামলাটি। প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের শুনানি এবং যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শেষে গত ১৩ এপ্রিল মামলাটির রায় ঘোষণা অপেক্ষমান (সিএভি) রাখেন হাইকোর্ট। 

এর আগে ২০১৫ সালে পিলখানা হত্যাকাণ্ড মামলায় বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানির জন্য বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করা হয়।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআরের সদর দপ্তরে পিলখানা ট্র্যাজেডিতে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান। ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। পরে মামলা দুটি নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তরিত হয়।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) দীর্ঘ তদন্ত শেষে হত্যা মামলায় ২৩ বেসামরিক ব্যক্তিসহ প্রথমে ৮২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। পরে সম্পূরক অভিযোগপত্রে আরো ২৬ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করায় আসামি দাঁড়ায় ৮৫০ জনে।

এ ছাড়া বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় ৮০৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। পরে আরো ২৬ জনকে অভিযুক্ত করে মোট ৮৩৪ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। বিচার চলার সময়ে বিডিআরের ডিএডি রহিমসহ চার আসামির মৃত্যু হয়।

রায়ে বিডিআরের সাবেক ডিএডি তৌহিদসহ ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিএনপিদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য নাসিরউদ্দিন আহম্মেদ পিন্টু (প্রয়াত) ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীসহ ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ২৭৭ জনকে খালাস দেওয়া হয়।

রায়ের পর ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে দণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিরা তাদের সাজা বাতিল চেয়ে বিভিন্ন সময়ে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। আপিল শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ ব্যবস্থায় সর্বমোট ৩৭ হাজার পৃষ্ঠার পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়। এ জন্য মোট ১২ লাখ ৯৫ হাজার পৃষ্ঠার ৩৫ কপি ও অতিরিক্ত দুই কপি পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়। এর মধ্যে ৬৯ জনকে খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেন। গুরুত্বপূর্ণ এ মামলার শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্ট বিশেষ উদ্যোগ নেন। বিশেষ ব্যবস্থায় এই মামলার পেপারবুক তৈরি করা হয়।

বিচার হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসংলগ্ন আলিয়া মাদ্রাসা মাঠসংলগ্ন অস্থায়ী এজলাসে। বিচার শেষে ঢাকা মহানগর তৃতীয় বিশেষ আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামান ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন।

মামলায় আসামিদের মধ্যে বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য নাসিরউদ্দিন আহম্মেদ পিন্টু ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীরও দণ্ড  হয়েছে। সাজা ভোগ করার সময় বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টু অসুস্থ হয়ে মারা যায়।

রক্তাক্ত ওই বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী এ বাহিনীর নাম পুনর্গঠন করা হয়। নামবদলের পর এ বাহিনী এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) হিসেবে পরিচিত।