‘খালেদাকে নিয়ে আশঙ্কা নেই’

আলোকিতপ্রজন্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:০৩ পিএম, সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০১৯ | ৪৪১

কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড জানিয়েছে, খালেদা জিয়াকে নিয়ে আশঙ্কা নেই। গত সাত মাসে তার বেশ উন্নতি হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্থিতিশীল রয়েছে। কিন্তু কোনোভাবেই অবনতি হয়নি।

এছাড়া খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে বিএনপি ও খালেদা জিয়ার পরিবারের অভিযোগ সত‌্য নয় বলেও জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু মেডিক‌্যালের চিকিৎসকরা। বিএনপির পক্ষ থেকে এবং খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদমাধ‌্যমে বিভিন্ন অভিযোগ করা হয়েছিল। সোমবার সংবাদ সম্মেলনে  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক এ কে মাহবুবুল হক এসব অভিযোগের জবাব দেন।

এ কে মাহবুবুল হক বলেন, প্রতিদিন ব্লাড পেশার, পালস দেখা হয়। প্রতিদিন দুইবার ওনার (খালেদা জিয়া) ব্লাড সুগার মাপা হয় এবং সে অনুযায়ী ইনসুলিন-ইনজেকশন দেয়া হয়। একদিন পরপর ফিজিও থেরাপি দেয়া হয়। মেডিক‌্যাল বোর্ড নিয়মিত যোগাযোগ অথবা প্রয়োজনবোধে আলাদাভাবে ওনার চিকিৎসা করে থাকেন।

বিএনপি নেতারা বলছেন ওনার শারীরিক অবস্থা এত খারাপ যে কারাগারেই মৃত‌্যুর আশঙ্কা করছেন তারা। এর ফলে দেশবাসী মধ‌্যে একটা প‌্যানিক সৃষ্টি হচ্ছে। আপনারা সংবাদমাধ‌্যমের সামনে কি একটু বলবেন বিএনপি নেতারা যে আশঙ্কা করছেন, আপনারও সেই আশঙ্কা করেন কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে মেডিক‌্যাল বোর্ডের চেয়ারম‌্যান মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. জিলন মিঞা সরকার বলেন, ‘ওনাদের নেতৃবৃন্দ আশঙ্কা করছেন জীবনহানির। আমরা কিন্তু আশঙ্কা করছি না। জীবনহানি প্রশ্নের ব‌্যাপকতা কিন্তু অনেক। জীবন আল্লার দান আল্লাহই রক্ষা করবেন।’

চিকিৎসা যথা নিয়মেই করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সততার সাথে অত‌্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে দেখি। তিনি সিনিয়র সিটিজেন। প্রধানমন্ত্রীর পরিচয় তো অনেক কিন্তু মানবিক দিকগুলো গুরুত্বপূর্ণ। ওনাকে দেখার ব‌্যাপারে বিন্দুমাত্র শেথিল‌্য করি না। তারপরও জীবনহানির কথা আপনারা বলতে পারেন। ওনারাও বলতে পারে। আমরা কিন্তু এভাবে আশঙ্কা করি না।

পরিচালক এ কে মাহবুবুল হক তার লিখিত বক্তব‌্যে বলেন, আমাদের অফিস সময় সকাল ৮টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত। এ সময়ের মধ‌্যে অধ‌্যাপকরা রাউন্ড শেষ করেন। একটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই যা আগে কখনো বলতে চাইনি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে যে বিষয়টি পরিস্কার করা দরকার। অধ‌্যাপকগণ তাদের স্বাভাবিক রাউন্ডে গিয়ে সব সময় বেগম খালেদা জিয়াকে দেখার সুযোগ পান না। ওনার কাছ থেকে পূর্বে অনুমতি নিতে হয়। বেশিরভাগ সময় তিনি দুপুর দেড়টা বা তার পরে সময় দিয়ে থাকেন। কিন্তু বাস্তবে নির্ধারিত সময়ে ওনার দেখা পাওয়া যায় না। অনেকবার অনেক সময় আমাদের বোর্ডের চিকিৎসকগণ সাড়ে চারটা পর্যন্ত বসে থেকেও ওনার সাথে দেখা করার সুযোগ পায়নি।

‘ওনার আর্থাইটিস রোগের চিকিৎসার জন‌্য আমাদের আন্তর্জাতিক খ‌্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞগণ যে অ‌্যাডভাইস করেছেন, ওই মেডিসিন নেওয়ার আগে আরো অন‌্যকিছু ভ‌্যাকসিন নিতে হয়। যা ওনাকে অ‌্যাডভাইস করা হয়েছে বেশকিছু দিন আগে। এখন পর্যন্ত এই ব‌্যাপারে ওনার সম্মতি পাওয়া যায়নি। তাই পুরনো নিয়মে ওনার বাত রোগের চিকিৎসা চলছে।’

তিনি বলেন, এখানে ভর্তির পর গত সাত মাসে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশ উন্নতি হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্থিতিশীল রয়েছে। কিন্তু কোনোভাবেই অবনতি হয়নি।

ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ‌্যাপক ডা. সাহানা আখতার বলেন, অত‌্যাধুনিক চিকিৎসা কিন্তু আমাদের দেশেও সম্ভব। যেকোনো একটা এক্সপেন্সসিভ চিকিৎসা বা অত‌্যাধুনিক চিকিৎসা দিতে হলে কিছু ভ‌্যাকসিন নিতে হয়, যে ব‌্যাপারে উনি সম্মতি দিচ্ছেন না।

ভ‌্যাকসিন নিতে রাজি হচ্ছেন না কেন এমন প্রশ্নে রিউমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক বলেন, ওনার কোনো এক আত্মীয়ের মনে হয় এ ধরনের ওষুধ নিয়ে একটু রিয়াকশনস হয়েছিল। এটাই উনি একটু ভয় পাচ্ছেন। উনি বলছেন, আমাকে সময় দেন আমি দেখি। আমরা ওনাকে সময় দিয়েছি। সম্মতি দিলেই ওনাকে ভ‌্যাকসিন দেওয়া হবে।

বেগম জিয়ার যেহেতু অবস্থার উন্নতি হয়েছে তাই তাকে আর কতদিন হাসপাতালে থাকতে হতে পারে এমন প্রশ্নে পরিচালক এ বিষয়ে কোনো মন্তব‌্য করতে রাজি হননি। তবে রিউমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক বলেন, আর্থাইটিস রোগের আধুনিক চিকিৎসা নেওয়ার জন‌্য ভ‌্যাকসিন নিলে তার হাসপাতালে থাকার দরকার আছে। এখন যে ট্রিটমেন্ট চলছে এটা বাসায় বা কারাগারে বসেও সম্ভব।

সোমবার দুপুর ১টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বি ব্লকের শহীদ ডা. মিল্টন হলে এ সংবাদ সম্মেলন হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. ফরিদ উদ্দিন।

এদিকে, সংবাদ সম্মেলনের পর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিকেলে প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, পরিচালক সরকারের শেখানো কথাই বলছেন। বিএসএমএমইউ এর পরিচালকের বক্তব্যে এটি সুষ্পষ্ট যে, ৭৫ বছর বয়সী ভয়ানক অসুস্থ সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে কারাবন্দি রেখে বিনা চিকিৎসায় তিলে তিলে নিঃশেষ করার মহাআয়োজন চলছে। প্রধানমন্ত্রীর মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে পরিচালকের বক্তব্যে।

উল্লেখ‌্য, গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের পর থেকে ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয় খালেদা জিয়াকে।