৫ মে নাটোরের লালপুর গণহত্যা দিবস

নাটোর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১০:২১ পিএম, শনিবার, ৪ মে ২০১৯ | ১১২৩

৫ মে নাটোরের লালপুর গণহত্যা দিবস। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ৫ই মে নাটোরের নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল চত্ত্বরের গোপাল পুকুরের পানি পাক বাহিনীর নারকীয় হত্যাযজ্ঞে শতাধিক মানুষ তাদের রক্ত দিয়ে পানিতে যে রক্তের সাগর সৃষ্টি করেছিলেন তাদেরই স্মরণে তার নাম করণ করা হয় শহীদ সাগর আর তার পাশ্বেই তৈরী করা শহীদ স্মৃতি যাদুঘর। সে সময়ে নাটোরের একমাত্র ভারী শিল্পই ছিল নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল। দেশের অন্যান্য এলাকার মত এই মিলের শ্রমিক কর্মচারী এবং কর্মকর্তারাও ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। আর তাদের সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলেন ওই মিলের প্রশাসক অবসরপ্রাপ্ত বাঙ্গালী সেনা কর্মকর্তা লেফটেনেন্ট আনোয়ারুল আজিম।

নাটোরের ময়নায় পাক বাহিনীর সাথে ইপিআর, আনসার ও মুক্তিকামী জনগণের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে মেজর আসলাম এবং ক্যাপ্টেন রাজা সহ তিন জনকে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের ভিতরে নিয়ে হত্যা করা হয়। মিলের ভাড়ি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে পাশ্ববর্তি ঈশ্বরদী এয়ারপোর্টের রানওয়েটিও অকেজো করে দেওয়া হয়। আর এসব অপরাধে ৫ মে সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের সবাই যখন কাজে ব্যস্ত ঠিক তখনই হামলা চালায় পাক সেনারা।

পাকসেনাদের অস্ত্রের মুখে নিরস্ত্র শ্রমিক কর্মচারীদের জিম্মি করে গোপাল পুকুর পাড়ে লেঃ আনোয়ারুল আজিমসহ শতাধিক ব্যক্তিকে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে। ওই বিভিষিকা থেকে যে কয়েকজন ব্যক্তি গুলি আর বেওনেটের আঘাতের পরেও বেঁচে গিয়েছেলেন তাদেরই মধ্যে সে সময়ের কৃষক মোঃ খোরশেদ আলম ও সে সময়ের এসবিএ খন্দকার জালাল আহম্মেদ জানালেন সেই ভয়াল স্মৃতির কথা। গত ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশে স্বাধীন হওয়ার পর থেকে প্রতি বছর নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের শহীদ সাগর চত্বরে ৫ মে পালিত হয়ে আসছে।

লেঃ আনোয়ারুল আজিমের নামে গোপালপুর রেল স্টেশনটির নাম করণ করা হয় আজিম নগর এবং ওই পুকুরের নাম দেয়া হয় শহীদ সাগর। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল প্রতি বছরই ৫ মে সারাদিন ধরে ওই সব শহীদদের স্মরণে কোরআন খতম ও মিলাদ মাহফিল সহ বিভিন্ন স্মৃতিচারণ মূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সে সব অনুষ্ঠানে পাকবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ থেকে বেঁচে যাওয়া কয়েকজন সহ শহীদ পরিবারের সদস্যরাও যোগ দেন।