ল্যাডারে সবাইকে তুলে সেদিন নিজে দাঁড়াতে পারেনি সোহেল


অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মানলেন ফায়ারম্যান সোহেল রানা। বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে আটকে পড়াদের উদ্ধারে গিয়ে নিজেই হারিয়ে গেলেন এই পৃথিবী থেকে। মধ্যরাতে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।
সোহেল রানার মৃত্যুর খবরে গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ইটনায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
গল্পটা এক ফায়ারম্যানের, এক যোদ্ধার, এক বীরের। সেদিন বনানীর এফ আর প্লাজায় আটকে পড়া মানুষগুলোর কাছে কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় পৌঁছেছে ফায়ার সার্ভিস। ভবনটিতে একসঙ্গে আটকে আছে বেশ কয়েকজন। ল্যাডারে সবাইকেই তোলা হলো। কিন্তু দাঁড়াবার জায়গা হলো না সেই যোদ্ধা সোহেল রানার।
চার ভাইবোনের মধ্যে বড়, তার উপার্জনেই চলে পুরো সংসার, ছোটদের লেখাপড়া। এসব ভাবার সময় কই, নিয়ন্ত্রণে আসেনি আগুন। আটকা পড়ে আছে অনেকেই দ্রুত নামতে হবে আবার উঠবে বলে। নিজের জীবনকে তুচ্ছ মনে করে ভেজা হতে টিটিএল এর সিড়ি বেয়ে নামার চেষ্টা। এক মুহূর্তে অসতর্কতা।
ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা জানান, দ্বিতীয়বার যখন সে আবার ওঠে। ওই কেসেও অতিরিক্ত লোকজন ওঠে। কেসের যে লোড ক্যাপাসিটি সে হত ওভার হয়ে যায়। সোহেল রানা চিন্তা করেছে, আমি-তো শিক্ষিত ফায়ার ফাইটার। আমি ল্যাডারে (উঁচু মই) দিয়ে নিচে নেমে যাই। সাধারণ মানুষগুলো বেঁচে যাক। পথিমধ্যে তার পা-টি আটকে যায় এবং পা ভেঙে যায়।
তারপর দশ দিনের যুদ্ধ। সেদিনের যুদ্ধে অনেকগুলো অসহায় মানুষকে বাঁচিয়ে জিতে গেলেও এবার কিন্তু হেরে গেছে ফায়ারম্যান। কাজ হয়নি দুনিয়া সেরা হাসপাতাল কিংবা ডাক্তারের বিদ্যা।
নিহতের ভাই জানান, আমাদের পুরো পরিবার ওনার নির্ভরশীল ছিল। পরিবারে একমাত্র সম্বল আমার ভাই-ই।
কিশোরগঞ্জের ইটনার কৃষক পরিবারের সন্তান ফায়ারম্যান। পরিবারের জন্য ও ছিলেন ত্যাগী। ভাই-বোনের সুখ আর স্বাচ্ছন্দের জন্য নিজের সুখের দিকেও তাকায়নি সে।
এলাকাবাসী জানায়, সোহেল খুবই ভালো ছেলে। সেই সাথে পরোপকারী ছিলেন।
ময়নাতদন্ত শেষে সিঙ্গাপুর থেকে দ্রুত সোহেল রানার মরদেহ দেশে আনার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।