ঝিনাইদহে টানা বর্ষণে

শীতকালীন সবজি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৩:৩৩ পিএম, শনিবার, ২১ অক্টোবর ২০১৭ | ৫৭১

ঝিনাইদহে এবার ধানের বাম্পার ফলন আশা করা হলেও গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

জেলার ৬টি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠের পর মাঠ পানিতে পড়ে গেছে ধানগাছ। এমন পরিস্থিতিতে আমন মৌসুমে ভালো ফলন পাবেন না বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

তবে কি পরিমাণ জমির ধান পড়ে গেছে তা কৃষি অফিস তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে। ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার রয়েড়া গ্রামের চাষি মো. জিকু লস্কর জানান, তিনি দুই বিঘা জমিতে হাইব্রিড ধানিগোল্ড ধানের চাষ করেছেন। এতে খরচ হয়েছে ১৬ হাজার টাকা। ধান খুব ভালো হয়েছিল। শীষ বের হয়ে দানা পুষ্ঠ হয়েছিল।

আশা ছিল অন্তত ৭০ মণ ধান হবে। ক্ষেতের ধান মাটিতে লেপটে গেছে। তার উপর হাঁটু পানি জমে আছে। এখন ১০ মন ধানও ঘরে উঠবে না। একই উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের চাষি রাশিদুল হাসান জানান, তাদের চার বিঘা জমির ধান মাটিতে লেপটে গেছে। ক্ষেতে এখন কোমড় সমান পানি। ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

কোটচাঁদপুর উপজেলার এলাঙ্গী ইউনিয়নের কুল্লাগাছা ও ফাজিলপুর গ্রামের কৃষক রজব আলী জানান, তিনি এবার প্রায় ৪ বিঘা জমিতে আমন ধান রোপণ করেছিলেন। এবার ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছিলেন তিনি।

কিন্তু গত দুই দিনের বৃষ্টির কারণে তার প্রায় ২ বিঘা জমির ধান মাথা ভারি হয়ে পড়ে গেছে। ওই ধান গাছে আর তেমন ফলন পাওয়া যাবে না। একই এলাকার হারুন জানান, তার প্রায় ২ বিঘা জমির ধান পড়ে গেছে। আশানুরুপ ফলন তিনি পাবেন না।

কালীগঞ্জ উপজেলার বেজপাড়া গ্রামের কৃষক মাসুদুর রহমান বলেন, এবার প্রায় ৫ বিঘা জমিতে আমন ধান রোপণ করেছি। প্রায় সব ধান পানিতে পড়ে গেছে।

ধানের ভালো ফলন হয়েছিল কিন্তু পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ধান ঘরে তুলতে পারব কিনা তা জানি না। ঘোষনগর গ্রামের আরেক কৃষক আমজাদ হোসেন জানান, বিঘা প্রতি প্রায় ২৫ মন ধান পেতাম কিন্তু এই বৃষ্টিতে ১০/১২ মনের বেশি ধান পাবো না। এই বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হলো আমাদের।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল করিম জানান, এ বছর কালীগঞ্জে আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ হাজার হেক্টর। কিন্তু এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১৮ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়েছে। কৃষকরাও বাম্পার ফলনের আশা করছিল। কিন্তু হঠাতই এই বৃষ্টিতে কৃষকদের বেশ ক্ষতি হবে বলে জানান তিনি। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলার ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক শংকর কুমার মজুমদার জানান, এবার এ জেলায় ৯৯ হাজার হেক্টরে রোপা আমনের চাষ হয়েছে।

প্রথম থেকে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ফসলের অবস্থা খুব ভালো ছিল। আগাম চাষ করা ধান পেকে গেছে। চাষিরা এ ধান কাটতে শুরু করেছে। বাকি ধানের ৯০ ভাগে শীষ বের হয়েছে। অবিরাম বর্ষণের সাথে দমকা হাওয়ায় ধানের ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “মাঠের পর মাঠ ধান গাছ মাটির সঙ্গে লেপটে গেছে। এছাড়া ক্ষেতে পানি জমেছে।

এতে ফলন বিপর্যয় হবে। আগাম শীতকালীন সবজি ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, শিম, পালংশাকেরও ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানান। ইতিমধ্যে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ তালিকাভুক্ত করছেন বলেও জানান শংকর কুমার মজুমদার।