১৩ ডিসেম্বর
মির্জাপুর মুক্ত দিবসে নৌকার পক্ষে প্রচারনা


টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে হানাদার মুক্ত দিবেসের র্যালি সমাবেশ নৌকার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারনায় রুপ নেয়। বৃহস্পতিবার সকালে মির্জাপুর হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে সদরে একটি র্যালি বের করে। র্যালিটি জয় বাংলা এবং নৌকা শ্লোগানে মুখরিত হয়ে সদরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষীণ করে প্রেসক্লাবের সামনে এসে সমাবেশ করে।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার অধ্যাপক দুর্লভ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তৃতা করেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আমিনুর রহমান লস্কর, মির্জাপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র মোশারফ হোসেন মনি, সরকার হিতেশ চন্দ্র পুলক, আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী একাব্বর হোসেনের পুত্র তাহরীম হোসেন সীমান্ত প্রমুখ।
বক্তারা বিজয়ের মাসে আর একটি বিজয়ের জন্য আগামী নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করার জন্য মুক্তিযোদ্ধা এবং এলাকাবাসীর প্রতি আহবান জানান।
বীর বাঙালীর বিজয়ের তিনদিন আগে বিজয়ের স্বাদ গ্রহন করে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরবাসী।১৩ ডিসেম্বর মির্জাপুর হানাদার মুক্ত দিবস। ৭১’র এই দিনটিতে মির্জাপুরের মুক্তিকামী দেশ মাতৃকার মুক্তির জন্য সাড়াশি অভিযান চালিয়ে মির্জাপুরকে হানাদার মুক্ত করে। মাতৃভুমির মুক্তির জন্য ঝড়েছে বহু তাজা প্রাণ এবং আত্মহুতি দিতে হয়েছে অনেক মুক্তিকামী দেশ প্রেমিকদের।
৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ শোনে মির্জাপুরের মুক্তিকামী মানুষ উজ্জীবিত হতে থাকে। ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নৃশংস ও বর্বর হামলা চালায় । ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পর পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য এ এলাকার যুব সমাজ সংঘটিত হতে শুরু করে।
মির্জাপুর সদয় কৃষ্ণ মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শরীরচর্চা শিক্ষক নিরঞ্জন সাহার তত্ত্বাবধানে চলে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ। কেউ কেউ কাদেরিয়া বাহিনীতে যোগ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিতে শুরু করেন। এছাড়া গঠন করা হয় সংগ্রাম পরিষদ।
মুক্তিযোদ্ধারা বেতার যন্ত্রের মাধ্যমে জানতে পারেন ৩ এপ্রিল পাক হানাদার বাহিনী টাঙ্গাইল প্রবেশ করবে। এর পর সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য ফজলুর রহমান ফারুকের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা গোড়ান-সাটিয়াচড়ায় বাংকার খনন শুরু করে। অন্যদিকে কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে মুক্তি বাহিনীর একটি দল নাটিয়া পাড়ায় অবস্থান নেয়।
৩রা এপ্রিল ভোরে পাকিস্তানী বাহিনী ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে গোড়ান-সাটিয়াচড়া নামক স্থানে পৌঁছার পর ইপিআর এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বাধার সম্মুখিন হয়। এর পর চলে তুমুল প্রতিরোধ যুদ্ধ। এ যুদ্ধে ২২ ইপিআরসহ ১০৭ বাঙালি শহীদ হন এবং প্রায় ৩শ জন পাকসেনা হতাহত হয়।
৩ এপ্রিলের যুদ্ধের পর পাক হানাদার বাহিনী মির্জাপুর থানা ও সার্কেল অফিসে ঘাঁটি গেড়ে এলাকায় জ্বালাও পোড়াও এবং নির্বিচারে মানুষ হত্যা শুরু করে। ৭ মে হানাদার বাহিনী ও এদেশীয় দোসররা মির্জাপুর গ্রামে গণহত্যা চালিয়ে দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা ও তার পুত্র ভবানী প্রসাদ সাহা রবিসহ ৩১ বাঙালিকে হত্যা করে। বাসায় আওয়ামীলীগ অফিস থাকা এবং গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের খবর আদান প্রদানের অপরাধে গুলি করে হত্যা করা হয় দেশ প্রেমিক মাজম আলীকে।
্এরপর শুরু হয় পাকিস্তানীদের উৎখাতের পালা। নবেম্বরে মুক্তিযোদ্ধারা মির্জাপুরকে পাক বাহিনীর দখলমুক্ত করলেও কয়েকদিনের মধ্যেই আবার পুনরায় দখল করে। এরপর কাদেরিয়া বাহিনীর সহায়তায় মুক্তিযুদ্ধের দুর্ধর্ষ কমান্ডার শাহ আজাদ কামাল, মো. একাব্বর হোসেন (বর্তমান এমপি) ও শহিদুর রহমান( মির্জাপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র), রবিউলসহ মুক্তিযোদ্ধারা সারাশি অভিযান চালিয়ে ১৩ ডিসেম্বর প্রাণপণ যুদ্ধ করে মির্জাপুরকে পাক বাহিনীর দখল মুক্ত করেন এবং তৎকালীন সিও অফিসে (বর্তমানে ইউএনও অফিস ) স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করে বীর বাঙালীর চুড়ান্ত বিজয়ের তিনদিন আগে মির্জাপুরবাসী বিজয়ের স্বাদ গ্রহন করে।