নন্দীগ্রামে বন্ধ হচ্ছে না কোচিং বাণিজ্য

শিক্ষা কি তবে পণ্যই রয়ে গেল?

মাসুদ রানা
প্রকাশিত: ০১:৫৬ পিএম, সোমবার, ২৬ নভেম্বর ২০১৮ | ৪৮১

বগুড়ার নন্দীগ্রামে প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিজেদের কর্মস্থলের সময় ফাঁকি দিয়ে প্রাইভেট কোচিং ব্যবসা জমজমাট করে তুলেছে। একই সাথে ব্যঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে অসংখ্য কিন্ডার গার্ডেন স্কুল। ওইসব স্কুলে প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বেশী সময় না দেয়ায় সুশিক্ষার মান কমছে। স্কুলের শিক্ষক, কলেজ ছাত্র, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছাত্রনেতা মিলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তৈরী করে চলেছে একের পর এক কোচিং সেন্টার।

এতে করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন কোচিং ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কবলে। উপজেলার আচঁলতা মাদ্রাসা, পন্ডিতপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়, বুড়ইল উচ্চ বিদ্যালয়, হাটকড়ই উচ্চ বিদ্যালয়, মাটিহাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাগবজর প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুন্দারহাট উচ্চ বিদ্যালয়, ডেরাহার উচ্চ বিদ্যালয়, বীজরুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পৌর শহরের পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাজী আব্দুল ওয়াজেদ বালিকা বিদ্যালয়সহ প্রায় শতাধিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের কর্মস্থলের সময় ফাঁকি দিয়ে নিজেদের বাসা ও অলিতে গলিতে অবৈধভাবে গড়ে তুলেছে শতশত কোচিং সেন্টার।

নামে বেনামে উপজেলা ও পৌর শহরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠেছে কিন্ডার গার্ডেন স্কুল। প্রতিমাসে সুশিক্ষায় গড়ে তোলার নামে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে কোচিং সেন্টার ও প্রাইভেট শিক্ষকরা ফায়দা লুটে নিচ্ছেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের তদারকি না থাকায় মাত্রারিক্তভাবে বেড়েই চলেছে অবৈধ কোচিং ব্যবসা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে উপজেলা ও শহরের অলিতে গলিতে গড়ে উঠছে কোচিং সেন্টার, কিন্ডার গার্ডেন স্কুল ও প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয় থেকে শুরু করে প্রায় সবকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা জড়িয়ে পড়েছেন কোচিং ব্যবসায়। অধিক লাভের আশায় প্রতিদিন বিদ্যালয়ের পাঠদান করানো থেকে কোচিং ব্যবসা চালানো ও প্রাইভেট ব্যবসায় তাদের আগ্রহ বেশী।

কোচিং সেন্টার ও প্রাইভেট পড়ানোর জন্য ছাত্রছাত্রীদের চাপ প্রয়োগ করায় বিশেষ করে নিম্ন আয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা রয়েছেন ভীষন বিপাকে। প্রাইভেট পড়তে যারাই অপারগতা প্রকাশ করেছে, যেসব শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেয়ার হুমকির অভিযোগ তুলেছেন অভিভাবকরা।

সুশিক্ষার জন্য নয়, শিক্ষকদের হুমকির ভয়েই শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট ও কোচিং সেন্টারে আসতে বাধ্য করা হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীদের প্রাইভেট শিক্ষার প্রতি মনোনিবেশ করায় প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়সহ কলেজগুলোতে কমে যাচ্ছে প্রতিদিনের উপস্থিতি। ফলে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা স্কুল ও কলেজের প্রকৃত শিক্ষা গ্রহনে বাধাগ্রস্থ।

এদিকে, সরকারীভাবে শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে নোট গাইড বই বিক্রি নিষিদ্ধ করা সত্তে উপজেলা ও পৌর শহরের অধিকাংশ লাইব্রেরীতে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে। সরকারী নিয়মনীতি উপেক্ষা করে লাইব্রেরীগুলোতে অবাধে বিক্রি হচ্ছে সরকারী বোর্ড বইসহ নোট ও গাইড বই। বিভিন্ন নাম সর্বস্ব কিন্ডার গার্ডেন স্কুল ও প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ের পাঠ্য তালিকায় অখ্যাত প্রকাশনা ও নিম্ন মানের বই অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে। আর এই কাজে সহযোগীতা করে যাচ্ছেন এক শ্রেনীর সার্থন্বেসী শিক্ষকরা।

এব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন রহস্যজনকভাবে নিরব থাকায় শিক্ষানূরাগী ব্যক্তিদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চালন হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষার্থীরা জানায়, কোচিং ও প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে পড়তে বাধ্য করাচ্ছে স্বস্ব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। কথা না শুনলে বিদ্যালয়ে গেলে অস্যেজন্যমূলক আচরণ করাসহ পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়।

বাধ্য হয়েই কোচিংয়ে যেতে হচ্ছে। অভিভাবকরা জানান, বর্তমানে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী অগ্নিমূল্যের কারনে ছেলেমেয়েদের স্কুল কলেজে পড়াতে যে টাকা খরচ হয়, সেটা কাটিয়ে উঠতে হিমশিম খেতে হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কোচিং ও প্রাইভেট পড়াতে হলে প্রত্যেক মাসে নূন্যতম তিনশত টাকা ও উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত এক একটি বিষয়ে চারশত টাকা থেকে পাঁচশত টাকা দিতে হয়।

একই ভাবে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে প্রত্যেক বিষয়ের জন্য নূন্যতম ছয়শত টাকা থেকে নয়শত টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে। বিশেষ করে প্রাইমারী ও কিন্ডার গার্ডেন স্কুলের শিক্ষকরা বাসায় গিয়ে বাচ্চাদের পড়ালে নূন্যতম একহাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ তিনহাজার টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে। কিন্ডার গার্ডেন স্কুলে বাচ্চাদের ভর্তিতেও নেয়া হয় ডোনেশন কিংবা বড় অংকের ভর্তি ফি এমন অভিমত ব্যক্ত করেন অভিভাবকরা।

এ বিষয়ে দামগাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান বলেন শিক্ষকদের কোচিং করানো শিক্ষামন্ত্রনালয়ের বিধিমালার মধ্যে নেই তবুও তারা কেন এ কাজ করছে তা আমার বোধগম্য নয় । একই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা: শারমিন আখতার বলেন অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যাবন্থা নেওয়া হবে । এব্যাপারে ভূক্তভোগী অভিভাবক ও শিক্ষাথীরা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।