নন্দীগ্রামে নতুন ধানে কৃষকের ঘরে ঘরে নবান্নের প্রস্তুস্তি

মাসুদ রানা,নন্দীগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১২:৫৭ এএম, সোমবার, ১২ নভেম্বর ২০১৮ | ৫২৮

বাংলা মাস কার্তিক , অগ্রহায়নের সঙ্গে গা ঘেঁষা ঘেঁষি। শিশিরের মতো নিরবে অবির্ভাব ষড়ঋতুর দেশে নবান্নের সুবার্তা নিয়ে আসে কার্তিক ।

ফসলের মাঠে সোনালী হাসির আভা, ছড়িয়ে পড়ে কার্তিকের শুরুতেই, থাকে মোলায়েম কুয়াশার ছাতিম আর শিউলির মৃদু মন্দ সৌরভ হিমেল ছোঁয়া । সকাল সন্ধ্যার হেমন্তের মিহি কুয়াশা।

“আশ্বিন গেল কার্তিক মাসে পাকিল ক্ষেতের ধান, সাড়ামাঠ ভরি গাহিছে কে যেন, হলদি কোটার গান, ধানে গান লাগি বাজিছে বাজনা, গন্ধ উড়িছে বায়, কলমী লতায় দোলন লেগেছে, হেঁসে কুল নাহি পায়, নক্সী কাথার মাঠে কবি জসীম উদ্দিন এভাবেই কার্তিকের রূপ লাবন্য বর্ননা করেছেন । এবার আগে ভাগেই নবান্নের প্রস্তুস্তি শুরু হয়ে গেছে ।

বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় চিরায়ত নিয়মে হেমন্তের মধ্যে ভাগে নতুন ধান ঘরে তোলার পর বাঙ্গালির নবান্ন উৎসব শুরু হয় । বাংলার কৃষক সমাজ প্রাচীন কাল থেকে নবান্ন উৎসব পালন করে আসছে। কালের বিবর্তনে অনেক কিছুর পরিবর্তন হলেও কৃষকরা নবান্ন উৎসব পালন করতে ভুলে যায়নি আজও।

গ্রাম বাংলায় কৃষকেরা নবান্ন উৎসব পরিপূর্ন ভাবে উদযাপনের জন্য মেয়ে জামাইসহ আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে আমন্ত্রন করে এনে নতুন চালের পোলাও, পিঠা, ও পায়েসসহ রকমারি নিত্য নতুন খাবার তৈরী করে ধুম-ধামে ভুঁড়ি ভোজের আয়োজন চলছে। এবিষয়ে উপজেলার রিধইল গ্রামের কৃষক মোকছেদ আলী বলেন, গ্রাম্য বধুরা জামাইকে সাথে নিয়ে বাপের বাড়িতে নবান্ন উৎসব পালন করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে।

নবান্ন উৎসবে গ্রামের কৃষকেরা মিলে-মিশে গরু, মহিষ ও খাঁসি জবাই করে। হাট-বাজারের থেকে বড় মাছ কিনে আনে । এই নিয়মের ধারাবাহিকতায় কৃষকদের ঘরে ঘরে চলছে এখন ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসবের আমেজ। সব-মিলিয়ে নন্দীগ্রাম উপজেলার কৃষকরা নবান্ন উৎসব পালনের সর্বাত্বক প্রস্তুত্তি নিয়েছে।

এদিকে এখন পুরোদমে আমন ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। বর্তমানে ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা। সে ধান সিদ্ধ করে ভাঙ্গিয়ে নতুন ধানের চালে নবান্নের ও জামাই আদরের প্রস্তুস্তি নিচ্ছে তারা। জানাযায়, উপজেলার বিভিন্ন মাঠে আমন মৌসুমের বিনা-৭, ব্রি ধান ৪৯, ব্রি ধান ৩৪ ধান চাষ করেছে।

বর্তমানে কৃষকেরা এ ধান কেটে ঘরে তুলতে শুরু করেছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় আমন ধানের ফলন ভাল হয়েছে। আমন ধানের মধ্যে বিনা-৭ জাতের ধান বিঘা প্রতি ১৬ থেকে ১৮ মন হারে ফলন হয়েছে, বাজারে বিক্রয় হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, এবং ব্রি ধান ৪৯ প্রতি বিঘায় ১৮ থেকে ২০ মন হারে ফলন হচ্ছে এবং বাজারে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা বিক্রয় হচ্ছে বলে কৃষকরা জানান । রিধইল গ্রামের আলী আকবর, সোলাইমান, রফিকুল, আমজাদ, মোকছেদ।

দোহার গ্রামের সাইফুল, হাবিবুর, রাজু, করিম, দাসগ্রাম গ্রামের আজাদ, মিলন, হাবিব, নাজমুল হক, রায়হান, উপজেলা সদরের মোজাম্মেল হক, জাহিদুল ইসলাম, আল-আমিন প্রমুখ আমন ধান চাষ করেছেন। এদের মধ্যে রিধইল গ্রামের কৃষক জয়নাল আবেদিন এই প্রতিনিধিকে জানান, আমি ১একর জমিতে বিনা ধান-০৭ চাষ করেছিলাম, প্রতি বিঘায় ১৬ মন করে ধান পেয়েছি।

কৃষি অফিসের পরামর্শে ধান চাষ করেছিলাম ফলে খরচ কম হওয়ায় কিছুটা লাভের আশা করছি, এবং ধান একটু আগাম কাটতে পারায় রবি শস্যও চাষ করতে আমাদের সুবিধা হবে ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: মুশিদুল হক এই প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, এ বছর চলতি আমন মৌসুমে নন্দীগ্রাম উপজেলায় পৌরসভা সহ ৫টি ইউনিয়নে চলতি বছরে আমন ধানের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ১৯ হাজার ৮০০হেক্টর। এর এ জমি থেকে ৮৩ হাজার ১শ ৬০ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে।

এ বছর আবহাওয়া ভাল রোগ বালাই কম কৃষি অফিসের সময় মত পরামর্শ পেয়ে কৃষকরা জমিতে যে পরিশ্রম করেছে তাতে করে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এবং এ ধান ঘরে তুলে কৃষকরা আলু-সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকেছে ।