পরিত্যাক্ত ভবনে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন বাগাতিপাড়া ইউএনও

বাগাতিপাড়া (নাটোর) সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৩:২১ পিএম, রোববার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | ৫৬৯

নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন বসবাসের অনুপযোগী হওয়ায় পরিত্যক্ত ঘোষনা করা হয়েছে। ওই ভবন পরিত্যক্ত হওয়া প্রায় দু’বছর হলেও ইউএনও বসবাস করছেন সেখানে। বাসা ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল দিতে হয় না। আবার ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষনার পরে প্রাচীর সংস্কার কাজে লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সঠিক জবাব মিলেনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন বানুর কাছে। ভবনটি পরিত্যক্ত কিনা এব্যাপারে কোন তথ্য নেই উপজেলা প্রকৌশলী দপ্তরে। বাগাতিপাড়া উপজেলা প্রকৌশলী এএসএম শরিফ খান দাবি করেন, তিনি শুনেছেন ভবনটি পরিত্যক্ত। তবে এ সংক্রান্ত কোন চিঠি পত্র তিনি পান নাই।

স্থানীয় সরকার বিভাগের স্মারক নং-৪৬.০৪৬.০২৬.০০.১০০.২০১২-১৭৬১ পত্র সূত্রে জানা যায়, উপজেলা পরিষদে নির্বাহী কর্মকর্তার বসবাসের জন্য “রৌদ্র ছায়া” নামের ভবনটি ১৬মে ২০১৬ তারিখে জেলা কনডেমেশন কমিটি অনুষ্ঠিত সভায় পরিত্যক্তের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়। ভবন ব্যবহারের অযোগ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় তা সর্বোচ্চ দর প্রাপ্তি নিশ্চিত করে বিধি অনুযায়ী নিলামে বিক্রি করার প্রশাসনিক নির্দেশ দেন স্থানীয় সরকার বিভাগ। কিন্তু প্রায় দু’বছর হলেও বিধি অনুযায়ী কোনরুপ পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি। বরং নির্বাহী কর্মকর্তা পরিত্যাক্ত ওই ভবনে অদ্যবদি বসবাস করছেন। উল্টো ইউএন’র পরিত্যক্ত ভবন সংরক্ষণ ও নিরাপত্তার জন্য সীমানা প্রাচীর সংস্কার করতে গত অর্থ বছরের এপ্রিল মাসে প্রায় দু’লাখ টাকা খরচ করা হয়। অভিযোগ উঠেছে ওই বরাদ্দের অর্থ দিয়ে পরিত্যক্ত ভবন রং সহ অন্যান্য কাজ করা হয়েছে। পরিত্যাক্ত ওই ভবনের বৈদ্যুতিক মিটার না থাকায় উপজেলা পরিষদের আবাশিক পানির পাম্পের মিটার থেকে টানা সংযোগে চলছে বাসভবনটি। ভবনটি পরিত্যাক্ত হওয়ায় বাসা ভাড়াও দিতে হয় না। উপজেলা পর্যায়ে সরকারী উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হয়েও এমন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন না কি, ইচ্ছে করেই থাকছেন, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে ব্যপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। এমনকি স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে আসা এই চিঠির খবরও জানতেন না উপজেলার পরিষদের প্রকৌশলী দপ্তর।

উপজেলা প্রকৌশলী এএসএম শরিফ খান দাবী করেন, ‘নির্বাহী কর্মকর্তার ভবনটি পরিত্যক্ত শুনেছি কিন্তু এ সংক্রান্ত কোন তথ্য আমার কাছে নেই। দুই লাখ টাকা খরচ করা হয়েছে সঠিক, তবে তা ওই ভবনের প্রাচীর সংস্কার কাজে।’

এ ব্যাপারে বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন বানু বলেন, রৌদ্র ছায়া নামে বাস ভবন আমি আসার আগে খন্দকার ফরহাদ স্যারের সময়ে পরিত্যক্ত ঘোষনা করা হয়। মন্ত্রনালয়ের প্রশাসনিক অনুমিত লাগে সেটা পেলে এটা বিক্রি করা হবে। সয়েল টেস্ট চলছে। নতুন ভবনের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু করা হবে। আমি ঝুঁকি নিয়ে ভবনটিতে বাধ্য হয়ে আছি। ভবনটি পরিত্যাক্ত তাই ভাড়া দিতে হয় না। তবে বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়ে কোন উত্তর দেন নি তিনি।

জেলা আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি ও বাগাতিপাড়া উপজেলার তমালতলা কৃষি ও কারিগরি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ (সাবেক) বীরমুক্তিযোদ্ধা এ্যাড. মাজেদুর রহমান বলেন, ‘ইউএনও যা করছেন তা শুধু অনিয়ম-দূর্ণীতি নয়, এটি অপরাধ। বিদ্যুৎ বিল ও বাসা ভাড়া তিনি দেন না। একটি মেয়াদ পরিত্যাক্ত ভবনের সংস্কার কাজে সরকারি অর্থ ব্যয় করে রাষ্ট্রের অর্থ তছুর্বাদ করা হয়েছে। তাহলে উপজেলার সর্বোচ্চ সরকারি কর্মকর্তা হয়ে তিনি এমন অপরাধ করলে, জনগণ বিচার চাইবে কার কাছে? তাঁর কার্যালয়ে বড়করে সাইনবোর্ড দেওয়া ‘আমি ও আমার অফিস দূর্ণীতি মুক্ত’ কিন্তু বাস্তবে কি তাই? এমন অপরাধের ঘটনায় শাস্তি হওয়া দরকার।’

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন বলেন, বাগাতিপাড়া ইউএনও এর বাসভবন রোদ্র ছায়া পরিত্যক্ত ঘোষনা হয়েছে। পরিত্যক্ত ঘোষনা হওয়ায় ভাড়া দেয় না। নতুন ভবন হওয়ার জন্য আবেদ করেছে। তদবিরও করা হচ্ছে। নতুন একটি নক্সা হবে। ওই ভবনে মিটার আছে ইলেক্ট্রিসিটি বিল দেয়। নতুনভবন হলে সেটাতে উঠবে আর পুরাতন ভবন নিলামে কিক্রি করে ডিস্পজার করা হবে। তবে পরিত্যাক্ত ভবনে তিনি ঝুঁকি নিয়ে রয়েছেন সেখানে কোন ক্ষতি হলে তাঁর দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন।