কোটা সংস্কারের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে


প্রধানমন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। আজ মঙ্গলবার বিকলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সংবাদ সম্মেলনে করে এ কথা জানান তাঁরা।
কাল বুধবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট আহ্বান করেছে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনকারীরা। একইসঙ্গে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সারাদেশে সড়ক অবরোধ করার ঘোষণাও দিয়েছে তারা।
আজ মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এ ঘোষণা দেন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ইরফানুল হক।
আন্দোলনকারীরা জানায়, কোটা সংস্কারের দাবির পাশাপাশি আরো চারটি ইস্যুর কারণে তারা আবারও মাঠে নামতে বাধ্য হয়েছে। এগুলো হলো- দেশের ৯৮ শতাংশ সাধারণ ছাত্রছাত্রীকে রাজাকারের বাচ্চা বলার পরও মতিয়া চৌধুরীর ক্ষমা না চাওয়া, অর্থমন্ত্রীর আজকের সাংঘর্ষিক বক্তব্য, আটককৃতদের ছেড়ে না দেওয়া এবং আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব না নেওয়া।
গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদে দেওয়া বক্তব্যের জন্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীকে ক্ষমাপ্রার্থনা করার দাবি জানায় আন্দোলনকারীরা। এজন্য মঙ্গলবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত আলটিমেটামও দিয়েছিল তারা।
কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং রোববার দিবাগত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাড়িতে হামলা প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী গতকাল জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বলেছিলেন, ‘পরিষ্কার বলতে চাই মুক্তিযুদ্ধ করেছি, মুক্তিযুদ্ধ চলছে, চলবে। এই রাজাকারের বাচ্চাদের অবশ্যই আমরা দেখে নিব।’
জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘রাতের অন্ধকারে বাসভবনে হামলা চালিয়ে উপাচর্যের গায়ে হাত দেওয়া, ভাঙচুর ও তাণ্ডব চালানো, এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়, এটি জঘন্য অপরাধ। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়।’
কৃষিমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের নামে সাধারণ ছাত্রদের ব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে গতকাল এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এরা ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের উত্তরসূরি।’
মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘মূল গাত্রদাহ মুক্তিযোদ্ধা কোটা। পৃথিবীর দেশে দেশে যারা স্বাধীনতার জন্য জীবনবাজি রাখে তাদের সন্তানদের জন্য বিশেষ সুযোগ থাকে। এদের দাবি রাজাকারের সন্তানদের জন্য মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কোটা সংকুচিত করা। পরিষ্কার বলতে চাই মুক্তিযুদ্ধ করেছি, মুক্তিযুদ্ধ চলছে- মুক্তিযুদ্ধ চলবে এবং রাজাকারের বংশধরদের অবশ্যই আমরা দেখে নেব। তবে ছাত্রদের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো রাগ নেই। কারণ ফেসবুকে যারা স্ট্যাটাস দিয়েছে এরা তো ছাত্র না, এরা মতলববাজ, স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরের এজেন্ট। এদের সম্পর্কে সামান্যতম শৈথিল্য আমরা দেখতে চাই না।’
এদিকে আগামী বাজেট অধিবেশনের পরই কোটা পদ্ধতির সংস্কার করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।
এ বছরের বাজেট অধিবেশন কবে শুরু হবে তা এখনো জানা যায়নি। তবে গত বছরের ৩০ মে বাজেট অধিবেশন শুরু হয়ে তা ১৩ জুলাই পর্যন্ত চলে।
অথচ গতকাল সোমবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকের পর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের আগামী ৭ মের মধ্যে এই সমস্যা সমাধান করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘মে মাসের ৭ তারিখের মধ্যে আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি, দেখছি কী দাঁড়ায়।’
অথচ আজ অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কোটা অবশ্যই থাকবে। তবে এটাকে সংস্কার করতে হবে। এখন কোটায় সব পাওয়া যায় না। ফলে মেধা কোটা থেকেই নিতে হয়। এ অবস্থায় সংস্কার করা জরুরি। আগামী বাজেট অধিবেশনের পরই কোটা সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে যৌক্তিক পর্যায়ে আনা হবে।’