চকরিয়ায় একজন গ্রাহকের অসহায় কাঁন্না

কক্সবাজার জেলা সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৪:৫৪ পিএম, বৃহস্পতিবার, ২৯ মার্চ ২০১৮ | ৪৬৩

পিডিবি চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ বিলে গরমিল, নতুন মিটার স্থাপন ও ট্রান্সফরমার সংস্কারে দীর্ঘসূত্রতাসহ নানা অভিযোগ শুনলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ। গতকাল বুধবার সকালে নগরীর আগ্রাবাদস্থ পিডিবি প্রধান কার্যালয়ে দুদকের গণশুনানিতে ৩৮ জন গ্রাহক দুদক কমিশনারের কাছে এসব অভিযোগ করেন।

বিদ্যুৎ বিলের গরমিলের সমাধান চাইতে যাওয়া এক গ্রাহককে পিডিবির মিটার রিডার ওমর ফারুক সমাধান না দিয়ে বিদ্যুৎ ভবনের ৪ তলা থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করতে বলার অভিযোগে ঐ মিটার রিডারের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক শাস্তির ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন দুদক কমিশনার। এছাড়া পিডিবির গ্রাহকদের সুবিধার্থে প্রতি শনিবার বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত চট্টগ্রামের ১২টি শাখা অফিসে শুনানি করারও নির্দেশ দেন।

পাশাপাশি পিডিবির গ্রাহকদের সেবার মান বাড়াতে একটি হটলাইন নম্বর চালু এবং আসন্ন রমজানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে পিডিবি কর্মকর্তাদের পরামর্শ দেন দুদক কমিশনার। বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকের অভিযোগের মধ্যে গণশুনানিতে চকরিয়া পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের শমসের পাড়ার ছৈয়দ আলমের ছেলে মনসুর আলম মিন্টু।

মনসুর আলম মিন্টু অভিযোগ করে বলেন, ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে চেকের মাধ্যমে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে এখনোও বিদ্যুৎ সংযোগ ও মিটার পাইনি। পরবর্তীতে আরও ৫০ হাজার টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় উল্টো আমার বৃদ্ধ বাবাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বিদ্যুৎ অফিস থেকে বের করে দিয়েছেন পিডিবির চকরিয়া উপজেলার আবাসিক ফয়জুল আলীম।

এসময় অভিযোগকারী বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে ছৈয়দ আলমের মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের অ্যাকাউন্ড থেকে পিডিবি কর্মকর্তাকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দেওয়া ও উত্তোলনে ব্যাংকের হিসাব বিবরণী কপি এবং সংশ্লিষ্ট কাজগপত্রও দুদক কমিশনারের হাতে দেন।

মনসুর আলম মিন্টু বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারি বাবার (ছৈয়দ আলম) অ্যাকাউন্ড থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিই। টাকা নিয়ে এক বছর ধরে বিদ্যুৎ সংযোগ দিবে দিবে বলে কালক্ষেপন করতে থাকেন। পরবর্তীতে চলতি বছরের ৭ মার্চ আমার বাবা চকরিয়া বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে প্রকৌশলী ফয়জুল আলীমের কাছে সংযোগ দিতে দেরি হওয়ার কারণ জানতে চান। এসময় তাড়াতাড়ি সংযোগ পেতে হলে তিনি আরও ৫০ হাজার টাকা দাবি করলে বাবা রাজি হননি। তখন বাবা আগের টাকাগুলো ফেরত চান। তখন প্রকৌশলী ফয়জুল উল্টো বিদ্যুৎ অফিস থেকে আমার ৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ বাবাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন।

তিনি আরও বলেন, টাকা দেওয়ার বিষয়, বাবাকে গলা ধাক্কা দিয়ে অপমানের বিষয়গুলো স্থানীয় চেয়ারম্যানকে জানানো হলেও কোনো সুরাহা পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে ২২ মার্চ চকরিয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে পিডিবির প্রকৌশলী ফয়জুল আলীম, দেবানন্দ দত্তসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে আমার বাবা একটি ফৌজদারী মামলা দায়ের করেন। মামলার খবর পেয়ে পরদিন বিকেলের দিকে ফয়জুল সাহেবসহ আরও বেশ কয়েকজন আমাদের বাড়িতে গিয়ে বাবাকে আবারো অপমান করেন। এমনকি মামলা তুলে নিতে নানা ধরনের হুমকি দেন। তখন বাবা রাজি হননি। পরে বাড়ি থেকে ফিরে গিয়ে সরকারি কাজে বাঁধা দিয়েছে বলে বাবার বিরুদ্ধে মামলা করেন পিডিবির ওই প্রকৌশলী। এ মামলায় আমার বাবাকে থানায় ধরে নিয়ে যায়।

কান্না জড়িত কণ্ঠে মনসুর আলম মিন্টু আরও বলেন, আমার বৃদ্ধ বাবা এখনো জেলহাজতে। ওরা মিথ্যে মামলা দিয়ে বাবাকে জেল খাটাচ্ছে। সংযোগ পেতে টাকা দিয়ে হয়রানি কিনে নিয়েছি! আমি এর সু–বিচার চাই।

মনসুর আলম মিন্টু বিচার চেয়ে এক পর্যায়ে দুদক কমিশনারের পায়ে ধরে ফেলেন। এ সময় বাবাকে জেল থেকে ছাড়ানো এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও অনুরোধ জানান। এসব অভিযোগ শুনে দুদক কমিশনার দুঃখ প্রকাশ করেন এবং পিডিবি চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চান।

তখন প্রবীর কুমার সেন বলেন, চকরিয়ার বিষয়টি নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি তদন্ত করছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।