ইসরায়েলকে একঘরে করতে একজোট দক্ষিণ আফ্রিকা-কলম্বিয়ার নেতৃত্বে 'হেগ গ্রুপ'

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:৫৩ পিএম, শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ১২৬

ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধের জেরে ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে করতে সমন্বিত অর্থনৈতিক ও আইনি পদক্ষেপের জন্য নিবেদিত অ্যাক্টিভিস্ট রাষ্ট্রগুলোর ক্রমবর্ধমান জোট ‘হেগ গ্রুপ’ নিউ ইয়র্কে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হয়েছে। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে আসা বিশ্বনেতাদের উপস্থিতিতে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। খবর দ্য গার্ডিয়ান।

বৈঠকে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহামাদ হাসান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি ইসরায়েলকে 'গণহত্যার উপকরণ' সরবরাহ করা থেকে বিরত থাকার জন্য আইনি ও নৈতিক দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। তিনি জোর দেন যে, ইসরায়েলের অবৈধভাবে ফিলিস্তিনি ভূমি দখলকে সমর্থনকারী বহুজাতিক সংস্থাগুলোকে চিহ্নিত করা প্রয়োজন।

দক্ষিণ আফ্রিকা ও কলম্বিয়ার সহ-নেতৃত্বে পরিচালিত এ গ্রুপ ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে বেশ কিছু ব্যবহারিক পদক্ষেপের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে অস্ত্র এবং দ্বৈত-ব্যবহারের ভারী যন্ত্রপাতিসহ বিভিন্ন পণ্য ইসরায়েলে স্থানান্তর রোধ করতে বন্দর ও বিমানবন্দরগুলোতে সম্মিলিত পদক্ষেপ বাড়ানো।

গ্রুপটি গাজায় ইসরায়েলি অবরোধ ভাঙার চেষ্টায় নিয়োজিত ফ্লোটিলাকে সমর্থন এবং ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকে বাদ দেয়ারও আহ্বান জানিয়েছে।

ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরা তার বক্তব্যে 'ক্ষোভকে কর্মে, আইনকে ন্যায়বিচারে এবং ন্যায়বিচারকে শান্তিতে' পরিণত করার আহ্বান জানান। ব্রাজিল সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় যোগ দিয়েছে। ভিয়েরা বলেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে একটি রাষ্ট্রের কেবল গণহত্যা থেকে বিরত থাকাই নয়, বরং এটি প্রতিরোধ করাও বাধ্যতামূলক। দখলদারিত্বের প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার দাবি অপ্রযোজ্য বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ব্রাজিল দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ বিরোধী মডেলের অনুকরণে জাতিসংঘের একটি আন্তর্জাতিক মিশন গঠনেরও আহ্বান জানিয়েছে। ‘হেগ গ্রুপ’-এর আরেক সদস্য চিলি এরই মধ্যে ইসরায়েল থেকে তাদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

ফিলিস্তিনের জাতিসংঘ দূত রিয়াদ মনসুর মনে করেন, এই গ্রুপটি জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এবং ইসরায়েলকে অস্ত্র ও পরিষেবা পাওয়া থেকে বিরত রাখতে একটি 'গুরুত্বপূর্ণ বাঁক' হিসেবে কাজ করছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জেন ডাঙ্গর জানান, গণহত্যা সংঘঠনের 'ইচ্ছে' ইসরায়েলের আছে, এটা এখনো প্রমাণিত না হওয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে গণহত্যা প্রমাণ করা কঠিন। তবুও গাজায় গণহত্যা সংঘটিত হচ্ছে বলে একটি সাধারণ ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। তিনি যোগ করেন, গণহত্যা থামানো বিবেচনামূলক বিষয় নয়, বরং একটি বাধ্যবাধকতা। এর আগে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা এক প্রতিবেদনে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় গণহত্যা চালানোর অভিযোগের কথা জানান।

অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে তার ভাষণে গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তারা প্রায়শই গাজার বেসামরিক জনগণকে আক্রমণের এলাকা ছেড়ে যাওয়ার জন্য লিফলেট এবং টেক্সট মেসেজ পাঠিয়েছেন।