গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ষষ্ঠবারের মতো ভেটো যুক্তরাষ্ট্রের


গাজায় ‘তাৎক্ষণিক, নিঃশর্ত ও স্থায়ী’ যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবেশের জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বৃহস্পতিবার তোলা একটি প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। হামাস এবং অন্য গোষ্ঠীর হাতে থাকা সব বন্দির মুক্তির শর্তও ছিল এতে। দেশটি এ নিয়ে ৬ বার গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভোটো দিল। খবর আল জাজিরা।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্য দেশের মধ্যে ১৪টি এ প্রস্তাবে সমর্থন জানালেও শুধু যুক্তরাষ্ট্র এর বিপক্ষে ছিল। নিরাপত্তা পরিষদের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো প্রস্তাব পাস হতে হলে অন্তত নয়টি ভোটের প্রয়োজন হয়। সেই সঙ্গে পাঁচ স্থায়ী সদস্য– যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীনের ভেটো দেয়া থেকে বিরত থাকতে হয়।
প্রস্তাবে বলা হয়, গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান ক্রমাগত সম্প্রসারিত হচ্ছে এবং তাতে বেসামরিক মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে– এই পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে এবং অবিলম্বে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধের আহ্বান জানানো হচ্ছে। তাছাড়া গাজার জনসংখ্যাগত বা ভৌগোলিক পরিবর্তনের যে কোনো চেষ্টার বিরোধিতা আবারও নিশ্চিত করা হচ্ছে।
এতে আরো বলা হয়, খাদ্য সংকট পর্যবেক্ষণকারী বৈশ্বিক শীর্ষ সংস্থার গত মাসের এক প্রতিবেদনের পর গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, গাজা শহরে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে এবং যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তার ওপর নিষেধাজ্ঞা না উঠলে তা পুরো অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
নিরাপত্তা পরিষদের নির্বাচিত ১০ সদস্য দেশের তরফে কথা বলার সময় ডেনমার্ক বলেছে, গাজায় মানবিক সংকট মোকাবেলায় পরিষদের যে দায়িত্ব রয়েছে তা মনে করিয়ে দিচ্ছে প্রস্তাবটি।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক উপ-বিশেষ দূত মর্গান ওরতাগুস বলেন, প্রত্যাশিতভাবেই যুক্তরাষ্ট্র এ প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান কোনো চমক নয়। প্রস্তাবের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এটি হামাসের কর্মকাণ্ডের নিন্দা করতে ব্যর্থ হয়েছে কিংবা ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। বরং এটি এমন ভুল ভাষ্যকে বৈধতা দিয়েছে, যা হামাসকে সুবিধা দিচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভুল ভাষ্যগুলো এ পরিষদেও গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।
তার মতে, জাতিসংঘ-সমর্থিত ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) গত মাসে গাজায় দুর্ভিক্ষের যে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছিল, তা 'ত্রুটিপূর্ণ পদ্ধতিতে' নির্ধারিত হয়েছে। বরং তিনি সেখানে গ্লোবাল হিউম্যানিটেরিয়ান ফ্যাসিলিটি হাবগুলোর কাজের প্রশংসা করে বলেন, হাবগুলো মানবিক সহায়তা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। যদিও এসব হাবে খাবারের সন্ধানে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের হত্যার শিকার হতে হচ্ছে।
এদিকে ভোটের পর জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মানসুর বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো দেয়ার বিষয়টি 'গভীরভাবে দুঃখজনক'। এটি একদিকে যেমন গাজায় চলমান নৃশংসতা বন্ধে নিরাপত্তা পরিষদকে তার ভূমিকা পালনে বাধা দিল, তেমনি অন্যদিকে গণহত্যার মুখে থাকা বেসামরিক মানুষকে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিল।