চন্দ্রগ্রহণের সময় কি গর্ভবতী নারীর সতর্ক থাকা উচিত


বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক অঞ্চলে চন্দ্রগ্রহণকে ঘিরে গর্ভবতী নারীদের জন্য নানা রকম নিষেধাজ্ঞা প্রচলিত আছে। অনেকে বিশ্বাস করেন যে, চন্দ্রগ্রহণের সময় কিছু নিয়ম না মানলে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু এসব ধারণার পেছনে আসলে কতটা সত্যতা আছে?
প্রচলিত ধারণা
১. ছুরি বা কাঁচি ব্যবহার নিষেধ
বিশ্বাস করা হয়, গ্রহণের সময় ধারালো জিনিস ব্যবহার করলে শিশুর শরীরে কাটা দাগ বা জন্মদোষ দেখা দিতে পারে।
বলা হয়, চন্দ্রগ্রহণের সময় সূচ ব্যবহার করলে বা সেলাইয়ের কাজ করলে শিশুর ঠোঁটে ফাটল বা অন্যান্য অঙ্গ বিকলাঙ্গ হতে পারে।
৩. বাইরে বের হওয়া নিষেধ
ধারণা আছে, চন্দ্রগ্রহণের সময় বাইরে বের হলে এর অশুভ রশ্মি শিশুর ক্ষতি করতে পারে।
অনেকেই বিশ্বাস করেন, চন্দ্রগ্রহণ চলাকালে খাবার ও পানি দূষিত হয়। এসময় খাবার খেলে বা পানি পান করলে গর্ভের শিশুর অসুখ-বিসুখ হতে পারে।
৫. শরীরে লোহা রাখা
কিছু কিছু এলাকায় এসময় গর্ভবতীকে ছুরি, চাবি বা লোহার আংটি শরীরের সঙ্গে রাখতে বলা হয়, যাতে অশুভ প্রভাব দূরে থাকে।
বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা
চন্দ্রগ্রহণ মূলত এমন একটি প্রাকৃতিক ঘটনা যখন পৃথিবী সূর্য ও চাঁদের মাঝখানে এসে চাঁদের উপর ছায়া ফেলে। এ সময় চাঁদ লালচে বা কালচে দেখা যায়।
>> লাইভ সায়েন্স-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, চন্দ্রগ্রহণ গর্ভবতী নারীর জন্য অন্য দিনের চেয়ে আলাদা কোনো ঝুঁকি তৈরি করে না। শিশুর বিকলাঙ্গতা বা জন্মদোষ চন্দ্রগ্রহণের কারণে হয় না, বরং এগুলোর সঙ্গে জেনেটিক কারণ, অপুষ্টি, সংক্রমণ বা হরমোনজনিত সমস্যার সম্পর্ক আছে।
>> সেই সঙ্গে আরো বলা হয়েছে যে, চন্দ্রগ্রহণের সময় খাবার বা পানি দূষিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তাই খাবার খেলে গর্ভবতী ও শিশুর ক্ষতি হবে — এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
চন্দ্রগ্রহণ এক দুর্লভ এক প্রাকৃতিক দৃশ্য, কিন্তু এর সঙ্গে গর্ভবতী নারীর শারীরিক ক্ষতির কোনো বৈজ্ঞানিক সম্পর্ক নেই। বরং এসব কুসংস্কার মানতে গিয়ে অনেক সময় নারীরা অপ্রয়োজনীয় চাপ ও ভয়ের মধ্যে থাকেন, যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই অহেতুক ভয় ও ভুল ধারণা ভেঙে বিজ্ঞানের আলোকে গর্ভবতী নারীর যত্ন নিন।
সূত্র: নাসা, আমেরিকান প্রেগন্যান্সি অ্যাসোসিয়েশন, মায়ো ক্লিনিক