ডায়াবেটিস রোগী কি করলে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে

লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:৫১ পিএম, শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ১১৯

ডায়াবেটিস রোগীর মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায় দীর্ঘসময় কোনো ধরনের শারিরীক কার্যকলাপ ছাড়া বসে থাকার অভ্যাস। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির মেইলম্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘসময় বসে কাটালে এবং পর্যাপ্ত মাত্রায় শারিরীক পরিশ্রম না করলে মৃত্যুর ঝুঁকি ব্যাপক মাত্রায় বেড়ে যায়।বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এ ঝুঁকি মারাত্মক আকার ধারণ করার শঙ্কা অনেক বেশি। তবে পর্যাপ্ত মাত্রায় ব্যায়াম করা গেলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের স্থবির জীবনযাত্রাজনিত আয়ু-হ্রাসের ঝুঁকি অনেকটাই কমে আসে।

গবেষণায় ২০০৭-২০১৮ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন এক্সামিনেশন সার্ভের (এনএইচএএনইএস) ২০ বছর বা তার বেশি বয়সী প্রাপ্তবয়স্ক ডায়াবেটিস রোগীদের তথ্য পর্যালোচনা করা হয়। ওই জরিপে অংশগ্রহণকারীরা নিজেরাই তাদের শারীরিক কার্যকলাপের মাত্রা জানিয়েছিলেন। মাত্রার ভিত্তিতে গবেষণার আওতাধীনের তিন ভাগে ভাগ করা হয়। বিভাজনগুলো হলো— নিষ্ক্রিয় (যারা সপ্তাহে ১০ মিনিটেরও কম সময় শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকেন), অপর্যাপ্ত মাত্রায় সক্রিয় (সপ্তাহে ১০ থেকে ১৪৯ মিনিট সময় শারিরীকভাবে সক্রিয়) এবং সক্রিয় (যারা সপ্তাহে ১৫০ মিনিট বা তার বেশি সময় সক্রিয় থাকেন)।

এ সময়ের মধ্যে গবেষণার আওতাভুক্তদের মৃত্যুবরণ সংক্রান্ত বার্ষিক মধ্যমা গড় তথ্য ব্যবহার করে দেখা গেছে, যারা দীর্ঘক্ষণ বসে থাকেন এবং যাদের শারীরিক কার্যকলাপ কম বা একেবারেই নেই, তাদের মধ্যেই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বেশি। গবেষকরা জানান, দিনে ৮ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় বসে থাকলে ডায়াবেটিস আক্রান্ত নিষ্ক্রিয় প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে স্বাভাবিকের তুলনায় ৭৩ শতাংশ। আর যারা অপর্যাপ্ত মাত্রায় সক্রিয়, তাদের মৃত্যু ঝুঁকি স্বাভাবিকের চেয়ে ৭৪ শতাংশ বেশি। গবেষণায় পাওয়া এসব ফলাফল ‘ডায়াবেটিস কেয়ার’ জার্নালে নিবন্ধ আকারে প্রকাশিত হয়েছে।

ব্যক্তিগত আলস্য বা পেশাগত প্রয়োজনে অনেকেই দীর্ঘসময় বসে থাকা বা স্থবির জীবনযাপন করেন। কারণ যা-ই হোক না কেন, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অভ্যাস।

গবেষণা নিবন্ধটির লেখকদের মধ্যে অন্যতম জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. সান্দ্রা এস আলব্রেখট বলেন, ‘দীর্ঘসময় বসে থাকার কারণে মানুষের রক্তপ্রবাহে সমস্যা হয়। বিশেষত শরীরের নিচের অংশে। এর ফলে রক্তজমাট বাঁধতে পারে, যা হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকসহ বিভিন্ন জটিলতা তৈরি করে।’

দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার কারণে সৃষ্ট স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে ইউনিভার্সিটি অব পিটসবার্গের চিকিৎসা বিজ্ঞানী ড. জেসন এনজি বলেন, দীর্ঘসময় বসে থাকার ফলে রক্তপ্রবাহ ধীর হয় এবং রক্তনালিতে চর্বি জমে। শরীরের প্রয়োজনীয় কিছু এনজাইম সক্রিয়তা হারিয়ে ধীরগতি হয়ে পড়ে দেহের চর্বি বিপাক কার্যক্রম। একই সঙ্গে বেড়ে যায় ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সও। পাশাপাশি অলস ও ব্যবহারহীন থাকায় দুর্বল হয়ে পড়ে দেহের পেশি। এগুলোর সম্মিলিত প্রভাবে রক্তচাপ এবং রক্তে চিনি ও কোলেস্টেরলের একযোগে বেড়ে মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

যাদের কাজের কারণে দীর্ঘসময় বসে থাকতে হয়, তাদের জন্য গবেষক দলের সদস্য ড. সান্দ্রা এস আলব্রেখটের পরামর্শ হলো, ‘৩০ থেকে ৬০ মিনিট পরপর উঠে দাঁড়াতে ও হাঁটতে হবে। হাঁটা সম্ভব না হলে অন্তত দাঁড়াতে হবে। এছাড়া যাতায়াতের সময় হাঁটা, সাইক্লিং বা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করাও গাড়িতে বসে থাকার চেয়ে স্বাস্থ্যকর। আর যদি সময় থাকে তাহলে করতে ভালো লাগে এমন ব্যায়াম বেছে নেয়া উচিত। এ ঝুঁকি প্রশমনে নিয়মিত করা যায় এমন ব্যায়ামই সবচেয়ে কার্যকর।’

— মেডিকেল নিউজ টুডে অবলম্বনে। সুত্র:বণিক বার্তা