জলবায়ু বিপর্যয় থেকে বাঁচতে নাগরিকত্ব বিক্রি করছে দ্বীপরাষ্ট্র নারু


নারু সরকারের পরিকল্পনা হলো—এই অর্থ দিয়ে দ্বীপের ১২ হাজার ৫০০ জন বাসিন্দার ৯০ শতাংশকে উঁচু জায়গায় সরিয়ে নিয়ে নতুন করে একটি বসতি গড়ে তোলা। নারুর প্রেসিডেন্ট ডেভিড অ্যাডিয়াং সিএনএনকে বলেন, ‘বিশ্ব যখন জলবায়ু নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত, আমরা তখন নিজেরাই নিজেদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার কথা ভাবতে বাধ্য হচ্ছি।’
নারুর পাশে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে বৈশ্বিক গড় হারের চেয়ে দ্রুত। এরই মধ্যে দ্বীপটির অনেক মানুষ তাদের উপকূলবর্তী জমি হারিয়েছেন। কেউ কেউ জোয়ারের পানিতে হারিয়েছেন নিজেদের বসত বাড়িও। এই সংকট মোকাবিলায় নারু চালু করেছে ‘গোল্ডেন পাসপোর্ট’ কর্মসূচি। নাগরিকত্বের বিনিময়ে পাওয়া অর্থ ব্যয় হবে জলবায়ু অভিযোজন ও অবকাঠামো নির্মাণে।
তবে এ ধরনের পাসপোর্ট বিক্রির ইতিহাস বিতর্কিত। ১৯৯০ এর দশকে নারুর আগের একটি নাগরিকত্ব বিক্রির প্রকল্পের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ওই সময় আল কায়েদার দুজন সন্দেহভাজনকে নারুর পাসপোর্টসহ মালয়েশিয়ায় আটক করা হয়।
তবে এবারের প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তত্ত্বাবধান থাকবে বলে জানিয়েছে নারুর সরকার। অপরাধী ইতিহাস আছে এমন ব্যক্তি, কিংবা জাতিসংঘের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ যেমন রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার নাগরিকদের এই পাসপোর্ট দেয়া হবে না বলে জানিয়েছে তারা।
নারুর পাসপোর্টধারীরা যুক্তরাজ্য, হংকং, সিঙ্গাপুর ও আমিরাতসহ ৮৯টি দেশে ভিসামুক্ত ভ্রমণের সুযোগ পাবেন। তবে এসব নাগরিকের বড় অংশ হয়তো নারু দ্বীপে কোনোদিন পা রাখবেন না বলেই ধারণা।
একসময় ফসফেট খনি থেকে রাষ্ট্রীয় আয়ের বড় অংশ আসত নারুর। কিন্তু খনির কার্যক্রমে দ্বীপের ৮০ শতাংশ অঞ্চল এখন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ওইসব এলাকায় এখন শুধু খাঁজকাটা পাথরের মাঠ পড়ে আছে। ফলে এখন অধিকাংশ মানুষ উপকূলবর্তী এলাকায় গাদাগাদি করে বসবাস করছেন।
প্রথম বছরে এই কর্মসূচি থেকে প্রায় ৫৬ লাখ ডলার আয়ের আশা করছে নারু। লক্ষ্য হলো ধীরে ধীরে তা বাড়িয়ে ৪ কোটি ২০ লাখ ডলার পর্যন্ত তোলা, যা দেশটির সরকারের মোট আয়ের প্রায় ১৯ শতাংশ হতে পারে।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের গবেষক কিরস্টিন সুরাক বলেন, ‘এ ধরনের কর্মসূচি ছোট দেশগুলোর জন্য বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে। তবে এর সাফল্য নির্ভর করবে, এই অর্থ কেন, কীভাবে এবং কতটা স্বচ্ছভাবে ব্যয় করা হচ্ছে তার ওপর।’