টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসন

দলীয় কোন্দলে জর্জরিত আওয়ামী লীগ॥ সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:২৯ পিএম, শুক্রবার, ১৮ আগস্ট ২০২৩ | ৯৪

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনে নির্বাচনী হাওয়া বইছে। বিভিন্ন শুভেচ্ছার পাশাপাশি এ আসনের সম্ভাব্য বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা ব্যানার, ফেস্টুন, নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময়সহ বিভিন্নভাবে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। দলীয় মনোনয়ন পেতে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় নেমে পড়েছেন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা উন্নয়নমূলক কাজ, জনসভা, পথসভা, র‌্যালিসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করছেন। শুধু নির্বাচনী প্রচারণা নয়, জনসাধারণের সুখ-দুঃখের অংশীদারিত্বের প্রমাণ দিতে তারা মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন।

স্থানীয় ভোটারদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা ও তরুণ কর্মীদের কাছে টানছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ এলাকায় নির্বাচনী আমেজ তৈরি করছে। 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় নেতারা কোন্দলে জর্জরিত হওয়ায় বেকায়দায় কর্মীসমর্থকরা। অপরদিকে এ আসনে বিএনপিতে একক প্রার্থী থাকায় সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী ও ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের নিজ নিজ নেতাকর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় উঠান বৈঠক, কর্মীসভা, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন। পাশাপাশি যে যেমন পারছেন ক্লাব, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে আর্থিক অনুদান দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। 

এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রায় অর্ধডজন মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ায় দলীয় কোন্দল চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রত্যেক প্রার্থী দলের মধ্যে নিজস্ব বলয় (লোকবল) তৈরিতে ব্যস্ত থাকায় দলীয় কর্মসূচির চাইতে নেতা কেন্দ্রীক কর্মসূচি নিয়ে বিভক্ত কর্মীরা। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ দলীয় তানভীর হাসান ছোট মনির। বর্তমান সংসদ সদস্য স্থানীয় ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করে প্রায় সব সময় উঠতি বয়সী তরুণদের নিয়ে চলাফেরা করে থাকেন। এ কারণে ত্যাগী নেতাকর্মীরা তার (এমপির) কাছে যেতে পারেন না- এমন অভিযোগে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ভেতরে ভেতরে একাট্টা। বর্তমান সংসদ সদস্যের বাইরে যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হোক তারা তাকেই একযোগে সমর্থন দেবেন। তবে প্রকাশ্যে এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী সব প্রার্থীই নিজ নিজ অবস্থানে থেকে বিরোধী প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিচ্ছেন। এক প্রার্থী সমাবেশ আহ্বান করলে অপর প্রার্থীও একই স্থানে একই সময় সমাবেশ আহ্বান করছেন। এ নিয়ে গোপালপুর ও ভূঞাপুরে প্রার্থীর কর্মীদের মধ্যে মাঝে মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করতে দেখা যায়।

গোপালপুর উপজেলার সাত ইউনিয়ন, এক পৌরসভা এবং ভূঞাপূর উপজেলার ছয় ইউনিয়ন, এক পৌরসভা নিয়ে গঠিত টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) এ আসনে কখনও কোনো একক দলের একাধিপত্য দেখা যায়নি। স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত গত ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে পাঁচবার আওয়ামী লীগ, চারবার বিএনপি, একবার করে জাতীয় পার্টি ও জাসদের (সিরাজ) প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাতেম আলী তালুকদার ন্যাশনাল আওয়ামী লীগ পার্টির হাতেম আলী খানকে পরাজিত করেন। ১৯৭৯ সালে বিএনপি প্রার্থী আফাজ উদ্দিন ফকির জয়লাভ করেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের হাতেম আলী তালুকদার। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী শামছুল হক তালুকদার ছানু আওয়ামী লীগের হাতেম আলী তালুকদারকে পরাজিত করেন। ১৯৮৮ সালে নির্বাচিত হন জাসদের (সিরাজ) আব্দুল মতিন হিরু। তিনি পরাজিত করেন জাতীয় পার্টির শামছুল হক তালুকদার ছানুকে।

এরশাদের পতনের পর গণতন্ত্র-উত্তর প্রথম (১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ) নির্বাচনে বিএনপির আব্দুস সালাম পিন্টু আওয়ামী লীগের হাতেম আলী তালুকদারকে পরাজিত করেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদের একতরফা নির্বাচনে বিএনপির আব্দুস সালাম পিন্টু আবার এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি হেরে যান আওয়ামী লীগ প্রার্থী খন্দকার আসাদুজ্জামানের কাছে। ২০০১ সালে বিএনপি পুনরুদ্ধার করে আসনটি। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী খন্দকার আসাদুজ্জামানকে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে তৃতীয়বারের মতো এমপি নির্বাচিত হন আব্দুস সালাম পিন্টু। তিনি পান এক লাখ ৫ হাজার ২৭৩ ভোট। আর আওয়ামী লীগ প্রার্থী খন্দকার আসাদুজ্জামান পান এক লাখ ২ হাজার ৯৯৯ ভোট। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাল্লা ঘুরে খন্দকার আসাদুজ্জামানের দিকে। দ্বিতীয়বারের মতো এমপি নির্বাচিত হন তিনি। আব্দুস সালাম পিন্টু ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় কারাগারে থাকায় তার ছোট ভাই সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বিএনপির প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। খন্দকার আসাদুজ্জামান (আওয়ামী লীগ) পান এক লাখ ৪৪ হাজার ৭১০ ভোট, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু (বিএনপি) পান এক লাখ ৩ হাজার ৫০৯ ভোট। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী খন্দকার আসাদুজ্জামান ও জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) আব্দুল আজিজের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। তৃতীয়বারের মতো এমপি নির্বাচিত হন খন্দকার আসাদুজ্জামান। এতে খন্দকার আসাদুজ্জামান পান এক লাখ ৪০ হাজার ৭৫৯ ভোট এবং আব্দুল আজিজ পান ৪ হাজার ২৯৬ ভোট। খন্দকার আসাদুজ্জামান বয়সের ভারে ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার ছেলে খন্দকার মশিউজ্জামান রোমেল দলীয় মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হন। জার্মান আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, প্রবাস ফেরত ব্যবসায়ী ও টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক তানভীর হাসান ছোট মনির দলীয় মনোনয়ন পান। বিএনপি প্রার্থী তৎকালিন কেন্দ্রীয় যুব দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে পরাজিত করে এ আসনে প্রবাসীদের মধ্যে প্রথম তানভীর হাসান ছোট মনির এমপি নির্বাচিত হন।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ আসনে আওয়ামী লীগের হয়ে প্রচারণায় এখন পর্যন্ত মাঠে নেমেছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান ছোট মনির, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী গোপালপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুস ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু, ভূঞাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুদুল হক মাসুদ, সাবেক এমপি খন্দকার আসাদুজ্জামানের ছেলে ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য খন্দকার মশিউজ্জামান রোমেল, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খন্দকার আশরাফুজ্জামান স্মৃতি।

তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রের দাবি, দলীয় নেতাদের সাথে উন্নয়নকাজে স্থানীয় নেতাদের পরামর্শ না নেওয়া, ত্যাগী নেতাদের সংযুক্ত না করাসহ নানা কারণে দলের নেতাকর্মীরা বর্তমান এমপির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশী ছোট মনিরের বিরোধী বেশ কয়েকজন নেতা। এসব কারণে সিনিয়র অনেক নেতার সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের মনোনয়ন ঘিরে এই দূরত্ব বাড়ায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, বিলবোর্ড ভাঙচুরসহ নানা ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও চলতি বছরের (৬ ফেব্রুয়ারি) ভূঞাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুদুল হক মাসুদ গোপালপুরে কম্বল বিতরণ করতে গেলে বর্তমান সংসদ সদস্য ছোট মনিরের কর্মীরা তার গাড়ি বহরে হামলা চালায়। এ ঘটনায় ১০-১২ জন আহত হন। এ নিয়ে দুই পক্ষই সংবাদ সম্মেলন করে একে-অপরের উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করে। 

এছাড়া আওয়ামী লীগের অপরপক্ষের নেতাকর্মীরা পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, মনোনয়ন প্রত্যাশী ভূঞাপুর পৌরসভার মেয়র মাসুদুল হক মাসুদ শুধু ভূঞাপুর উপজেলাতে অবস্থান করেন। অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী গোপালপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ইউনুস ইসলাম তালুকদার ঠান্ডুও শুধু গোপালপুরে পরিচিতি রয়েছে। এই দুই নেতার নিজ উপজেলা ছাড়া অন্য উপজেলায় নেই কোন নেতাকর্মী ও জনসমর্থণ। এছাড়া সাবেক এমপি খন্দকার আসাদুজ্জামানের ছেলে খন্দকার মশিউজ্জামান রোমেল শুধু নির্বাচনের আগে এলাকায় এসে মনোনয়ন প্রার্থীতা ঘোষণা করে ঘুরে বেড়ায়। এদের নেই কোন নেতাকর্মী ও জনগনের সাথে সম্পৃক্ততা।  

বর্তমান সংসদ সদস্য ও টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান ছোট মনির টাঙ্গাইলের বহুল আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ হত্যা মামলার আসামি সাবেক এমপি রানাসহ তার ভাইদের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে আলোচিত নেতায় পরিণত হয়েছেন। এ কারণে তিনি গোপালপুর-ভূঞাপুরের যুবসমাজের কাছে জনপ্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। দলীয় সাংগঠনিক কাজের পাশাপাশি গোপালপুর-ভুঞাপুরের উন্নয়নে সব সময় সচেষ্ট রয়েছেন। তিনি এমপি নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং সামাজিক কর্মকান্ডে জনসাধারণের পাশে রয়েছেন। 

বর্তমান এমপি তানভীর হাসান ছোট মনির জানান, গোপালপুর-ভুঞাপুরের সাধারণ মানুষ তাকে সন্তানের মতো গ্রহণ করেছেন। তাদের পাশে তিনি নিরবচ্ছিন্নভাবে আছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন। আওয়ামী লীগ একটি সুপ্রাচীণ ও বৃহৎ দল। এ দল থেকে অনেকেই মনোনয়ন চাইতে পারেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একজন কর্মী হিসেবে বিগত সময়ে গোপালপুর-ভূঞাপুরের যে উন্নয়ন সাধিত করেছেন তাতে তিনিই দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ও পরার্মশে তিনি দুই উপজেলায় অনেক উন্নয়মূলক কাজ করে যাচ্ছেন। 

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী গোপালপুর উপজেলা পরিষদের তিনবারের চেয়ারম্যান ইউনুস ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু এর আগে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে পাননি। এবার আটঘাট বেধে মাঠে নেমেছেন- দলীয় মনোনয়ন পেলে তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে নির্বাচনে অংশ নেবেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগে তার অবদান রয়েছে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিন হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী গোপালপুর উপজেলা পরিষদের তিনবারের চেয়ারম্যান ইউনুস ইসলাম তালুকদার ওরফে ঠান্ডু বলেন, গত সংসদ নির্বাচনেও আমি প্রার্থী ছিলাম। এবারও গণসংযোগ করছি মনোনয়ন পাওয়ার জন্য। আমি আগামীতে নির্বাচিত হতে পারলে গোপালপুর-ভূঞাপুর এই নির্বাচনী এলাকাকে যোগ-উপযোগী পরিকল্পনা গ্রহণ করে মানুষের কল্যাণে দেশের কল্যাণে কার্যকর হবে সেই ভিত্তিতে কাজ করবো। নির্বাচিত হতে পারলে প্রথম কাজ থাকবে শিক্ষার মান উন্নয়ন করা, আমাদের এই চঞ্চলকে শিল্প এলাকা গড়ে তুলা যাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি। আমি আশাবাদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার আমাকে মনোনয়ন দিবে। 

এদিকে ভূঞাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুদুল হক মাসুদ দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে এলাকায় পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন সাটিয়েছেন। মহান স্বাধীনতার পর ভূঞাপুর উপজেলা থেকে কেউ এমপি নির্বাচিত হয়নি, বড় দলগুলো কাউকে মনোনয়নও দেয়নি। এবার তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন বলে বিশ্বাস করেন। সে লক্ষে স্থানীয় পর্যায়ে নানা উন্নয়ন কর্মকান্ড চালাচ্ছেন। সময়-অসময়ে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। 

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ও ভূঞাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুদুল হক মাসুদ বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন এবার মুক্তিযোদ্ধাদের মূল্যায়ন করবেন। ’৭৫ এ বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিবাদে জেল খেটেছি দীর্ঘদিন যে কারণে আমি আশাবাদী যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিবে। আমি নির্বাচিত হতে পারলে পূর্বাঞ্চল নদী-ভাঙন এলাকার মানুষ প্রতিবছর ভাঙনের কবলে পরে সেজন্য মূল টার্গেট ভেরিবাদ করার। যাতে করে নদী ভাঙন এলাকার মানুষ ও হাজার হাজার জমি ভাঙন থেকে রক্ষা পায়। আওয়ামী লীগ একটি বিশাল  দল সেখানে মনোনয়ন অনেকেই চাইবেন। আমি মনোনয়ন চাইছি দেখে বর্তমান সংসদ সদস্য আমাকে এড়িয়ে চলেন। শেখ হাসিনা বাবা-মা হারা মানুষ। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারী আমি। সেজন্য এবার আমাকে মূল্যায়ন করবেন।

অপর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী রাজধানীর ঢাকা ক্লাবের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য খন্দকার মশিউজ্জামান রোমেল মূলত একজন ব্যবসায়ী। বাবার সুনাম ধরে রাখতে তিনি টাঙ্গাইল-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। গোপালপুর-ভূঞাপুরের মানুষ নানা প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে বাবার সূত্রেই তার কাছে যান। তিনি সাধ্যমত তাদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করেন। নির্বাচনী এলাকায় যাতায়াত কম হলেও তিনি সব সময় যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন।

এদিকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় এ আসনের বিএনপির ক্ষমতাধর প্রার্থী সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর মৃত্যুদন্ডের আদেশ হওয়ায় এ আসনে বিএনপি এখন প্রায় নিষ্ক্রিয়। আসনটি পুনরুদ্ধারে তার ছোট ভাই কেন্দ্রীয় জাতীয়তাবাদী যুবদলের বর্তমান সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রার্থী হচ্ছেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় কারান্তরীণ বিএনপির সাবেক উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুস ছালাম পিন্টু জেলহাজতে থাকায় আইনি জটিলতায় তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারায় গতবারের মতো এবারও তার ছোট ভাই কেন্দ্রীয় জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হবেন এটা প্রায় নিশ্চিত।

এ বিষয়ে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, সরকারের জুলুম নির্যাতনের পরও এ আসনে বিএনপির জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রাম করছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন ও খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিলে বিএনপি অবশ্যই নির্বাচনে অংশ নেবে। টাঙ্গাইল-২ আসনে কেন্দ্রীয় যুব দলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু এই আসনে নির্বাচন করবেন। 

এছাড়া এ আসনে জাকের পার্টির প্রার্থী সংগঠনের টাঙ্গাইল পশ্চিমাঞ্চল কমিটির সভাপতি এনামুল হক মঞ্জু নির্বাচনে অংশ নিবেন বলে শোনা যাচ্ছে।

জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল-২ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪২ হাজার ৪২৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৭৩ হাজার ৩৯জন এবং মহিলা ভোটার এক লাখ ৬৯ হাজার ৩৮৯ জন।