এবারও বিক্রি হয়নি ৪৫ মণ ওজনের মানিক

স্টার্ফ রিপোটার
প্রকাশিত: ১১:১৮ এএম, মঙ্গলবার, ১২ জুলাই ২০২২ | ৪৩৮

এবারও বিক্রি হয়নি কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী হামিদার খামারে বেড়ে উঠা ৪৫ মণ ওজনের মানিক। ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত ঢাকার গাবতলী হাটে অপেক্ষার পরও বিশালআকৃতির ষাঁড়টি দেখে আকৃষ্ট হয়নি ক্রেতারা। এ নিয়ে তিন দফায় হাটে উঠলেও বিক্রি হলো না বিশালআকৃতির ষাঁড় মানিক। 

এরপরও হতাশ নন হামিদা। স্বপ্ন বাস্তবায়নে এবার বিশালআকৃতির ষাঁড় মানিককে লালন পালন করাসহ ছোট পরিসরে অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের দুগ্ধ খামার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

টাঙ্গাইল সা’দত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ইতিহাসে অর্নাস পাশ করা ছাত্রী হামিদা আক্তার টাঙ্গাইলের নাগরপুর ও দেলদুয়ার উপজেলার সীমান্তবর্তী লাউহাটি ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের ভেঙ্গুলিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল হামিদ ও রিনা বেগমের মেয়ে।

“ছাত্রীর খামারে ৪৫ মণের ষাঁড়, বিক্রি হবে ১৫ লাখ টাকায়” এ শিরোনামে দেশের সর্বাধিক পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগো নিউজ ২৪ ডট কমসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ গণ মাধ্যমে সংবাদটি প্রচার হয়।

আক্ষেপ করে হামিদা বলেন, বড়লোকদের সাথে বড় বড় খামারীর সম্পর্ক। ঈদের ১৫দিন আবার কোন খামারী এক মাসে আগেই গরু বিক্রি হয়েছে গেছে। আমাদের মত স্বপ্ন দেখা গরীব মানুষের জন্য ধনীরা নন।

দেশের সর্বাধিক পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগো নিউজ ২৪ ডট কমসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যমে আমার ৪৫ মণ ওজনের ষাঁড় মানিককে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পরও ষাঁড়টি কিনতে দেশ ও জেলার বিত্তবান ক্রেতাদের কেউ আমার বাড়িতে আসেননি। 

তবে ষাঁড়টি বিক্রির জন্য দেলদুয়ার উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা সাহেব আমাকে গাজীপুরের এক ব্যবসায়ির ফোন নম্বর দেন। আমি ওই ফোন নম্বরে যোগাযোগ করি, কিন্তু তিনি না দেখেই আমার ষাঁড়টির দাম বলেন মাত্র তিন লাখ টাকা। 

গত বছর করোনার কারণে গাবতলী হাটে মানিকের দাম উঠেছিল ৫ লাখ টাকা। তার আগের বছর মানিককে নেয়া হয়েছিল পুরান ঢাকার ঢলপুর বাজারে। সেখানে মানিকের ক্রেতা পাওয়া যায়নি। এ কারণে হাটে যাওয়ার ইচ্ছে ছিলনা আমার। 

মানিককে বিক্রির জন্য বাড়িতেই অপেক্ষা করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু প্রতিবেশী আর আত্মীয়দের পরামর্শে বাধ্য হয়ে ৭ জুলাই বৃহস্পতিবার রাতে মানিক আর সাড়ে ৭ মণ ওজনের আমার খামারের আরও একটি ষাঁড়টি নিয়ে যাই গাবতলী হাটে। গত বছর করোনার কারণে গাবতলী হাটে মানিকের দাম উঠেছিল ৫ লাখ টাকা। এবার কেউ দামই করেননি। এর আগের বছর মানিককে নেয়া হয়েছিল পুরান ঢাকার ঢলপুর বাজারে। সেখানে মানিকের ক্রেতা পাওয়া যায়নি।

ষাঁড় দুটি দেখভালের জন্য আমার সাথে যান মামাসহ তিনজন কামলা। দিনে জনপ্রতি ৭’শ টাকা করে দেয়ার চুক্তিতে নেয়া হয় ওই তিনজন কামলা। 

হামিদা বলেন, হাটের জায়গা ভাড়া নেয়া এক ব্যবসায়ির সকল গরু বিক্রি হয়ে যাওয়ায় তিনি আমাকে গরু দুটি রাখার ব্যবস্থা করে দেন। এরপরও গাবতলী হাটের লোকজন এসে জায়গার টাকা দাবি করেন। ওই ব্যবসায়ি নিজের গরু বলে প্রতিবাদ করার পরও দুই গরু বাবদ ২ হাজার টাকা নিয়েছেন হাটের ইজারাদাররা। 

হামিদা বলেন, হাটে উঠানোর চারদিনেও বড় গরু কেনার ক্রেতা পাইনি। কেউ মানিকের দামও করেননি। তবে সাত থেকে সাড়ে সাত মণ ওজনের যে ষাঁড়টি ছিল, সেটি বিক্রি হয় ১ লাখ ৭০ হাজার টাকায়। হাটে ক্রেতা না থাকায় ঈদের দিন সকালে মানিককে নিয়ে বাড়ি চলে আসি। 

খরচ প্রসঙ্গে হামিদা বলেন, হাটে যাতায়াত বাবদ গাড়ি ভাড়া ১০ হাজার, ইজারা বাবদ ২ হাজার, চারদিনের কামলা বেতন ২ হাজার ৮’শ টাকাসহ ব্যয়ে হয়েছে খাওয়ার খরচ। খাওয়ায় কত টাকা খরচ হয়েছে তার হিসেব করি নাই। এছাড়াও আমার মামা কোন টাকা নেননি।

স্বপ্ন দেখা হামিদা বলেন, গরুর বড় খামারী হতে না পারলেও এবার একটি দুগ্ধ খামার করবো। গাবতলী হাটে এবার বিক্রি করা ছোট ষাঁড়ের ১ লাখ ৭০ হাজার টাকাসহ আমার বিকাশ এজেন্ট, দর্জির কাজ আর ব্যবসার জমানো টাকা দিয়ে অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান কয়েকটি গাভীর বাচ্চা কিনবো। সেই বাচ্চা গুলো লালন পালন করে বড় করবো। এ জাতের গাভী অনেক দুধ দেয়। আমার সেই খামারে গাভী গুলোর সাথে মানিকও থাকবে। 
ছোট খামারীদের নানা ধরণের সহযোগিতা দেয় প্রাণীসম্পদ বিভাগ, সেখানে যোগাযোগ করার পরামর্শে হামিদা বলেন, অন্যের সাহায্য ছাড়াই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ইচ্ছে আমার। পড়ালেখা করেও নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবোনা, এটা মানতে আমি রাজি নই। আমি চাই আমাকে দেখে যেন সমাজের প্রতিটি মেয়েই নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হন। 
সফলতার জন্য দেশবাসীর দোয়া কামনা করেছেন তিনি।

লাউহাটি ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বুদ্দু বলেন, হামিদার ৪৫ মণের ষাঁড়টি বিক্রি হয়নি শুনে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি।

লাউহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীন মোহাম্মদ খান বলেন, হামিদার ষাঁড়টি এবারও বিক্রি হয়নি বলে শুনেছি। এতে হতাশ হয়েছি। দোয়া করি, দরিদ্র কৃষক পরিবারের বিশ^বিদ্যালয়ে পড়–য়া ছাত্রী হামিদার গরুর বড় খামারী হওয়ার স্বপ্নটা যেন পূরণ হয়। বড় খামার করতে সে যদি আমাদের সাহায্য সহযোগিতা চায়, তবে অবশ্যয় করবো। 

এ বিষয়ে দেলদুয়ার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. বাহাউদ্দিন সারোয়ার রিজভী জানান, করোনা পর থেকেই দেশে বড় গরুর চাহিদা কমে গেছে। দেশের প্রায় প্রতিটি হাটেই এবার চাহিদা ছিল মাঝারি আর ছোট গরুর। বেশিরভাগ বড় গরুই এবার অবিক্রিত রয়ে গেছে। এ কারণেই কলেজ ছাত্রী হামিদার গরুটি বিক্রি হয়নি। 

তিনি জানান, পাবনা ব্যাঙ্গ মিট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান মাংশের ওজনে গরু কেনেন। হামিদা চাইলে, সেখানে ষাঁড়টি বিক্রির ব্যবস্থা করে দিবেন। এতে আশানুরূপ দাম না পেলেও ষাঁড়টি বিক্রি করা সম্ভব হবে।