টাঙ্গাইলে সরবরাহকৃত পানির তীব্র সংকট, চরম ভোগান্তিতে গ্রাহকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৩৬ পিএম, সোমবার, ১১ এপ্রিল ২০২২ | ৪২২

টাঙ্গাইল পৌরসভার সরবরাহকৃত পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এর ফলে চরম ভোগান্তির মুখে পরেছেন পৌরসভার ১৮টি ওয়ার্ডের গ্রাহকরা। বিল বকেয়া না থাকা স্বত্তেও সরবরাহের পানি না পাওয়ায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।

চলমান পরিস্থিতির ফলে ইতোমধ্যেই দুই হাজার ষাটজন গ্রাহক পানির সংযোগ কর্তন করেছেন।  

টাঙ্গাইল পৌরসভার পানি সরবরাহ কেন্দ্রের তথ্যে জানা যায়, মোট গ্রাহক সংখ্যা ৭ হাজার ৭০৩জন। প্রতিটি সংযোগের ব্যাস অনুযায়ি বিল রয়েছে। এর মধ্যে হাফ ইঞ্চি ব্যাসের সংযোগ ফি ২৫০ টাকা, পৌনে এক ইঞ্চি ব্যাসের বিল ৬০০ টাকা আর এক ইঞ্চি ব্যাসের সংযোগ ফি ১হাজার ৬০০ টাকা। এর মধ্যে বিভিন্ন ব্যাসের কর্তনকৃত সংযোগের সংখ্যা ২ হাজার ৬০টি। শোধনাগার সংখ্যা ৩ টি। প্রতিটির মজুদ পানির পরিমাণ ৩০ লাখ লিটার। মোট মজুদ পানির পরিমাণ ৯০ লাখ লিটার। প্রতিদিনের পানির চাহিদা ২ কোটি ৫০ লাখ লিটার। সরবরাহ হচ্ছে গড়ে ৮০ লাখ লিটার। ঘাটতি পানির পরিমাণ ১ কোটি ৭০ লাখ লিটার। কেন্দ্রের তথ্যে আরও জানা যায়, হাল সনের বেসরকারি পাওনা ১ কোটি ২৭ লাখ ৮৮ হাজার ৭৬০ টাকা আর সরকারি পাওনা ১ কোটি ১৪ লাখ ৯৪ হাজার ৮৪৪ টাকা।

সরেজমিন শহরের দেওলা, কোদালিয়া, কলেজপাড়া, বটতলা, তালতলা, আকুরটাকুর পাড়া, আদালতপাড়া, থানাপাড়া ও বাজিতপুর সাহাপাড়ার বাসিন্দাদের বক্তব্যে পানি সংকটের তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের অভিযোগ, ওই এলাকার গ্রাহকরা প্রায় সপ্তাহখানে সময় যাবৎ চরম পানি সংকটে রয়েছে। কিছু বাড়ি পানি পেলেও সারাদিনে ভর্তি হচ্ছেনা এক বালতি পানি। স্থানীয় কাউন্সিলরদের অভিযোগ করেও কোন সুরাহা পাচ্ছেননা বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।

দেখা গেছে বাজিতপুর সাহাপাড়ার বাসিন্দা গৌতম সাহা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত তিন মাসের ১ হাজার ৮০০টাকা পরিশোধ করেছেন। এরপরও সরবরাহের পানি প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত রয়েছেন তিনি। বাজিতপুর সাহাপাড়ার গৃহপরিচারিকা মায়া সাহার অভিযোগ, গত চার-পাঁচদিন যাবৎ একবারের জন্যও জল পাচ্ছেন না তারা। যার ফলে হাউজে এক ফোটাও জল নেই। প্রতিবেশিদের বাসা-বাড়ি থেকে টিউবওয়েলের জল এনে কাজ করতে হচ্ছে। জল না থাকার কারণে তাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। বাড়ির মালিক দাদাকে সমস্যার কথা জানিয়েছি।

জয়া সাহা বলেন, পৌরসভার সরবরাহের পানি বাবদ প্রতি মাসে ২৫০ টাকা বিল দিচ্ছি। তবে এরপরও অনেকদিন যাবৎ স্বাভাবিকভাবে জল পাচ্ছিনা আমরা। এর মধ্যে মাঝে মাঝে কিছু জল পাওয়া গেলেও এখন প্রায় সপ্তাহখানে যাবৎ একবারেই জল পাচ্ছিনা। এ কারণে কষ্ট হলেও অন্যের বাড়ি থেকে জল এনে বাড়ি ঘরের কাজ করতে হচ্ছে। লক্ষ্মী দত্ত বলেন, ২৪ ঘন্টায় এক বালতি পানিও পাচ্ছেননা তারা। এরপরও প্রতিমাসে ২৫০ টাকা বিল দিতে হচ্ছে আমাদের।  

সাহাপাড়ার বাসিন্দা গৌতম সাহার ছেলে দেবাশীষ সাহা অপু বলেন, এ এলাকায় পৌরসভার পানি সরবরাহের প্রায় শতাধিক সংযোগ রয়েছে। গত পাঁচ-ছয়দিন যাবৎ সরবরাহের একটু পানিও পাচ্ছিনা আমরা। টিউবওয়েলের পানি দিয়ে চলছে বাসা বাড়ির কাজ। আমরা লিখিতভাবে কাউকে কোন অভিযোগ না করলেও ভীষণ সমস্যা ভোগ করছি। সরবরাহের পানি বাবদ প্রতিমাসে ৬০০টাকা বিল দিচ্ছি আমি।১০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বাদশা বলেন, আমি ভীষণ অসুস্থ, ঢাকায় চিকিৎসারত থাকায় বিষয়টি আমার জানা নেই।

পানি সরবরাহ কেন্দ্রের সহকারি প্রকৌশলী এ.এইচ.এম জাহাঙ্গীর আলম খান জানান, গ্রাহক চাহিদার তুলনায় আমাদের ঘাটতি পানির পরিমাণ ১ কোটি ৭০ লাখ লিটার। এরই মধ্যে শুষ্ক মৌসুমে পানির লেয়ার আরও নিচে নেমে যাওয়ায় পানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।

জনস্বাস্থ্য নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইবনে মায়াজ প্রামানিক জানান, টাঙ্গাইল পৌরসভার পানি সরবরাহের জন্য দুটি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট  (শোধনাগার)নির্মাণের টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এস.এম সিরাজুল হক আলমগীর জানান, পানি সরবরাহের পাম্প মেশিনের চার ইউনিটের ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যেই ইঞ্জিন গুলো সার্ভিসিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। ইঞ্জিনগুলোর সার্ভিসিং শেষে স্থাপন করা হলে পানি সরবরাহ অনেকটাই স্বাভাবিক হবে। এছাড়াও ঘাটতি পানির সমস্যা নিরসনে দুটি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (শোধনাগার) ওভার হেড ট্যাংক নির্মাণের টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।