জয়ের পথে আবারও ভ্লাদিমির পুতিনের দল


সমর্থন কমে গেলেও প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টি দেশটির পার্লামেন্ট নির্বাচনে আরেক দফা বড় বিজয়ের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
রবিবার সন্ধ্যায় ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই দলটি জয় পেয়েছে বলে দাবি করে।
পুতিনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে সোচ্চার সমালোচকদের এই নির্বাচনে অংশ নিতে দেয়া হয়নি এবং যে প্রার্থীরা এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন তাদের ব্যাপকভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়েছিল।
নির্বাচনকে ঘিরে ব্যালট বাক্সে আগেই ভর্তি করে রাখা এবং জোরপূর্বক ভোট দেওয়ার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।
কিন্তু রাশিয়ার নির্বাচন কমিশন ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
প্রাথমিক ফলাফল দেখা যায় যে, এ পর্যন্ত যে ৬৪% ভোট গণনা করা হয়েছে তাতে মি. পুতিনের ইউনাইটেড রাশিয়া প্রায় ৪৮% ভোট পেয়েছে। তার তার পরেই রয়েছে কমিউনিস্ট পার্টি যারা প্রায় ২১% ভোট পেয়েছে।
রবিবার রাতে, ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা আন্দ্রেই তুর্চাক মস্কোতে সমবেত সমর্থকদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি সেখানে বলেছেন স্টেট দুমা'র সাড়ে চারশো আসনের মধ্যে তিনশটিতে জিতছেন তারা।
আংশিক ফলে দেখা যায় যে, পার্লামেন্টে পুতিনের দল সহজেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখলেও এটি কিছুটা দখল হারিয়েছে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে দলটি ৫৪% ভোট পেয়েছিল।
পার্লামেন্টে কমিউনিস্টরা যারা পুতিনের উদ্যোগকে ব্যাপকভাবে সমর্থন করে, তাদের সমর্থন ৮% বেড়েছে। কিন্তু বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেস-এর তথ্য অনুযায়ী, দলটির নেতা গেনাডি জিউগানভ ব্যালট বাক্স ভর্তিসহ ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন।
ধারণা করা হচ্ছে যে, কারাগারে থাকা ক্রেমলিনের সমালোচক আলেক্সেই নাভালনির জীবনযাত্রার মান এবং দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে উদ্বেগ সম্ভবত পুতিনের দলের সমর্থনকে প্রভাবিত করেছে।
তবে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এবং জাতীয় গৌরব পুনরুদ্ধারের জন্য রাশিয়ার অনেক নাগরিকের কাছে তিনি এখনো জনপ্রিয়।
এই নির্বাচনে অনেক শহরে ইলেকট্রনিক ভোটিং ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
১৯৯৩ সালের পর প্রথমবারের মতো রুশ কর্তৃপক্ষের জারি করা কঠোর নিয়মকানুনের কারণে অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপ বা ওএসসিই এর কোন নির্বাচন পর্যবেক্ষক উপস্থিত ছিলেন না।
রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত, গোলোস নামে স্বাধীন ভোট পর্যবেক্ষণ গ্রুপ যা রুশ কর্তৃপক্ষ "বিদেশি এজেন্ট" হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তারা জানিয়েছে যে, তারা ভোটে অনিয়মের সাড়ে চার হাজারেরও বেশি অভিযোগ শনাক্ত করেছে।
এদিকে রাশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাংবাদিকদের বলেছে যে, তারা কোনও "উল্লেখযোগ্য অনিয়মের" অভিযোগ পাননি।
সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে, নির্বাচনের সময় ভোট কেন্দ্রের বাইরে দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে।
বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স জানিয়েছে যে, বিশেষ করে থানার বাইরে এই ধরণের ঘটনা দেখা গেছে। এ সম্পর্কিত অভিযোগে বলা হচ্ছে যে, মানুষকে জোর করে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র।
কিন্তু রুশ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও ভোটাধিকার বিষয়ক সংস্থা গোলোস বলেছে যে, তারা মানুষের কাছ থেকে "অসংখ্য বার্তা" পেয়েছে যেখানে তারা অভিযোগ করেছে যে, তাদের নিয়োগকর্তারা ভোট দিতে বাধ্য করছে এবং নির্বাচনে জালিয়াতিও হয়েছে।
রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের কিছু অংশে, রাশিয়ার নাগরিকত্ব রয়েছে এমন অধিবাসীদের ভোট দেওয়ার অনুমতি পেয়েছে। কেউ কেউ সীমান্ত অতিক্রম করে রাশিয়ার ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোটও দিয়েছেন।
এদিকে রাশিয়ায় ভোটের দিনে, কারাগারে থাকা বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনির চালু করা স্মার্ট ভোটিং অ্যাপ অ্যাপল এবং গুগলের স্টোর থেকে সরিয়ে ফেলার ঘটনায় ক্ষোভও দেখা গেছে।
অ্যাপটি সরাতে অসম্মতি জানালে রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ ওই দুটি কোম্পানিকে বড় অংকের জরিমানা করার হুমকি দিয়েছিল। অ্যাপটি ব্যবহারকারীদের জানায় যে কিভাবে তারা ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের অপসারণ করতে পারে।
নাভালনির সহযোগী লিওনিড ভোলকভ প্রযুক্তি জায়ান্টদের বিরুদ্ধে "ক্রেমলিনের ব্ল্যাকমেইলের আড়ালে লুকিয়ে" থাকার অভিযোগ তুলেছেন।
মস্কোর একজন বাসিন্দা জানিয়েছেন বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, তিনি ক্ষমতাসীন দলকে ভোট দিয়েছেন কারণ তিনি বিশ্বমঞ্চে রাশিয়ার প্রভাব পুনরুদ্ধারের জন্য পুতিনের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেন।
কিন্তু নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক অনীহাও ছিল।
ইরিনা নামে মস্কোর একজন বাসিন্দা বলেন, "আমি ভোট দেয়ার কোন মানে দেখছি না। কারণ আমাদের জন্য এরইমধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে গেছে।"