সরকার গঠনে তাড়া নেই তালেবানের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:২৬ এএম, মঙ্গলবার, ১৭ আগস্ট ২০২১ | ৩৬৪

আফগানিস্তানে সরকার গঠন নিয়ে কোনো রকমের তাড়াহুড়া করতে চায় না তালেবান। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর ধীরেসুস্থে সরকার গঠন করতে চায় তারা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি পাওয়া নিয়েও খুব একটা চিন্তিত নয় কট্টর ইসলামপন্থী এই সংগঠনটি। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ভারত, ইরান কিংবা পাকিস্তানের মতো দেশগুলো যে ধরনের আভাস দিয়েছে, তাতে তালেবান সরকারকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে খুব একটা বেগ পেতে হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।

kalerkanthoজাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা অবিলম্বে সব বৈরিতার অবসান এবং আফগান নেতৃত্বাধীন, আফগানিস্তানের নিজস্ব জাতীয় পুনর্মিলন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। তাদের প্রত্যাশা, আফগানিস্তানের এই প্রক্রিয়ায় সব আফগান নাগরিক এবং বিদেশিরা গুরুত্ব পাবে।

এদিকে প্রায় ২০ বছর পর তালেবানের অধীনে আরেকটি সূর্যোদয় হলো রাজধানী কাবুলে। গতকাল সোমবার শহরটিতে ঘরের বাইরে তালেবান যোদ্ধা ছাড়া একটি কাকপক্ষীও চোখে পড়েনি। মানুষের যতটুকু গাদাগাদি, তা শুধু কাবুল বিমানবন্দরেই ছিল। হাজার হাজার মানুষ দেশ ছাড়তে আগের দিনই জড়ো হয়েছিল সেখানে। একটি বিমান রানওয়েতে দাঁড়াতেই শত শত মানুষ তাতে উঠতে হুড়াহুড়ি করছিল। বিমানের সিঁড়ির রেলিং বেয়েও ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করতে দেখা গেছে অনেক মানুষকে। উড্ডয়নের পর বিমান থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে দুজনের। এর মধ্যে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে বিমানবন্দর এলাকায়। এতে পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনার জন্য কোনো কোনো গণমাধ্যম তালেবানকে দায়ী করেছে; কোনো কোনো গণমাধ্যম দায়ী করেছে মার্কিন সেনাদের।

আফগান পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল রাতে জরুরি বৈঠকে বসে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। বৈঠকে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা অবিলম্বে সব বৈরিতার অবসান এবং আফগান নেতৃত্বাধীন, আফগানিস্তানের নিজস্ব জাতীয় পুনর্মিলন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। তাদের প্রত্যাশা, আফগানিস্তানের এই প্রক্রিয়ায় সব আফগান নাগরিক এবং বিদেশিরা গুরুত্ব পাবে। বৈঠকে ভারত বলেছে, তারা তালেবানকে স্বীকৃতি দিতে চায় না। আফগানিস্তান ইস্যুর সঙ্গে সম্পৃক্ত দেশ হিসেবে এই বৈঠকে অংশ নেওয়ার সুযোগ না পাওয়ায় চীন অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।

এ ছাড়া আজ মঙ্গলবার দুপুরে জরুরি বৈঠকে বসবেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা। আফগানিস্তান থেকে এরই মধ্যে নিজ দেশের নাগরিকদের সরিয়ে নিয়েছে যুক্তরাজ্য, ফিনল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, দক্ষিণ কোরিয়া, নিউজিল্যান্ড, সৌদি আরব ও সুইডেন।

তালেবানের হাতে রাজধানী কাবুলের পতন ঘটার পরেই প্রশ্ন উঠেছে আফগানিস্তানের নতুন সরকার ব্যবস্থা কেমন হবে। তালেবান জানিয়েছে, নতুন সরকারের কাঠামো যা-ই হোক না, সে বিষয়ে তাদের কোনো তাড়াহুড়া নেই। এক তালেবান নেতার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, কিভাবে আফগানিস্তান শাসন করা হবে, তা নিয়ে সংগঠনটির নেতারা এখনই ভাবছেন না। বিদেশি সেনারা চলে যাওয়ার পর তাঁরা সরকারব্যবস্থা পুনর্গঠনে হাত দেবেন।

গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধের ইতি ঘোষণা করে তালেবান। মুহাম্মদ নাইম নামের এক তালেবান মুখপাত্র আলজাজিরাকে বলেন, ‘আজকের দিনটি আফগান জনগণ ও তালেবান যোদ্ধাদের জন্য ঐতিহাসিক। আজ আমাদের দেশে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটল।’ তিনি জানান, কাবুলে অবস্থানরত সবার সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে। কারো ওপর প্রতিশোধ নেওয়া হবে না।

তালেবান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে, সে বিষয়ে এরই মধ্যে অনেক দেশ নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি পেতে হলে আফগানিস্তানের পরবর্তী সরকারকে অবশ্যই জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে সন্ত্রাসীদের কোনো প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগান ইস্যুতে দু-এক দিনের মধ্যেই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

তালেবানকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি চীন অবশ্য পরিষ্কার করেই বলেছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনাইং বলেন, ‘আমরা তালেবানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়তে রাজি আছি। এ ছাড়া আফগান জনগণ নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে যে সিদ্ধান্ত নেবে, আমরা তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাব।’

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আফগানবিষয়ক বিশেষ দূত জামির কাবুলোভ জানিয়েছেন, কাবুলে অবস্থিত রুশ দূতাবাসের কর্মীরা তালেবানের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। কাবুল দখল করার পরেই রুশ দূতাবাসে বিশেষ গার্ড মোতায়েন করে তালেবান।

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন, মার্কিন সেনাদের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। এদিকে আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির অংশ হিসেবে অভিহিত করেছেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল। গতকাল দলীয় এক বৈঠকে মার্কেল বলেন, ‘প্রায় দুই দশক পর আফগানিস্তান থেকে ন্যাটো সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্র প্রায় একতরফাভাবে নিয়েছে এবং এই সিদ্ধান্ত ছিল তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিরই অংশ।’

সামরিক বিমান বিধ্বস্ত : উজবেকিস্তানে একটি আফগান সামরিক বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। উজবেকিস্তানের স্থানীয় গণমাধ্যম গ্যাজেটা এক প্রতিবেদনে জানায়, গত রবিবার রাতে আফগানিস্তানের সীমান্তঘেঁষা সুরোজনদারিও প্রদেশে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। এতে আফগান সামরিক বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য ছিলেন। তবে তাত্ক্ষণিকভাবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। আগের দিন উজবেকিস্তান জানায়, অনুপ্রবেশের অপরাধে তারা আফগানিস্তানের ৮৪ সেনাকে আটক করেছে। সূত্র : বিবিসি, এএফপি, রয়টার্স, ডন।