শিক্ষিকা ইসরাতের প্রশান্তি ছাদ বাগানে


গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার লতিফপুর এলাকার বাসিন্দা ইসরাত জাহান। তিনি নিজ বাসার ছাদে গড়ে তুলেছেন বাগান। ফুল, ফল, সবজি ও ঔষধিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে বাগানে। অফিস ও সংসারের কাজ শেষে বেশিরভাগ সময় কাটে ছাদ কৃষিতে। বাগানে উৎপাদিত ফল ও সবজি একদিকে যেমন নিজেদের চাহিদা মেটায়, অপরদিকে আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীর মাঝেও বিতরণ করছেন। তার ছাদ কৃষি দেখে অনেকেই উৎসাহি হয়ে উঠছেন।
ইসরাত জাহান পেশায় একজন শিক্ষিকা। তিনি গোয়ালবাথান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত আছেন।অফিস ও বাসার কাজ করে অবসর সময়টা তিনি কাজে লাগান ছাদ বাগানে। ২০১৯ সালে ছাদ বাগান শুরু করেন। প্রথমে ছাদে অল্প কিছু ফলের গাছ দিয়ে শুরু। বর্তমানে বাগানে প্রায় ৫০ জাতের ফুল ফল, সবজি ও ঔষধি গাছ রয়েছে।
ফলজ গাছের মধ্যে রয়েছে কয়েক প্রজাতির আম, করমচা, আনার, কলা, পেঁপে, চায়না কমলা, জাম্বুরা, কমলা লেবু, চায়না থ্রি লিচু, মাল্টা, সফেদা পেয়ারা, অরবড়ই, আমড়া ইত্যাদি। সবজির মধ্যে রয়েছে ঢেরস, মরিচ, বরবটি, করলা, বেগুন, লেবু, ধুন্দুল, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, চালকুমড়া, পুঁইশাক, ডাটা শাক, ধনেপাতা, চিচিঙ্গা, মিষ্টি মরিচ,মুলা শাক, কচু শাক,ক্যাপসিকাম, টমেটো, লাল শাক, গাজর, শশা ইত্যাদি।
ঔষধি গাছের মধ্যে তুলসী, পুদিনাপাতা, পাথরকুচি এছাড়া বাগানের সৌন্দর্য বর্ধনে রয়েছে নানা জাতের ফুলের গাছ যেমন বেলি, রঙ্গন, কামিনি, বেলি,পর্তুলিকা , জুই, বাগান বিলাস, পাতাবাহার, রেইন লিলি, অপরাজিতা, মানিপ্ল্যান্ট, টগর, গোলাপ, নয়ন তারা, হাসনাহেনা, মালতী, গাঁধা, ক্যাকটাস, জবা, চায়না বট, চন্দ্রমল্লিকা ও ঘাসফুল।
ইসরাত জাহান বলেন, ছোট থেকেই গাছের প্রতি প্রচন্ড রকম ভালোবাসা আর মায়া কাজ করতো । বাবাকে দেখতাম সকাল বেলা আমাদের বাগান বাড়ি চলে যেত সেখানে গিয়ে সারাদিন গাছ রোপন সহ পরিচর্যা করত বাবা। ১৯৯৫ সালেই ৫০০০ কাঠ গাছ রোপণ করেছিলেন। বাবার গাছের প্রতি ভালোবাসা আমাকে অনুপ্রাণিত করত। বাবা নেই সেই শূন্যতা থেকেই গাছ রোপণের নেশা শুরু।
শুরুটা ফুল গাছ দিয়ে, বারান্দা ও রুমে গাছ রাখা শুরু করি এর মধ্যে লকডাউন আশায় সুযোগটা কাজে লাগাতে চেষ্টা করি। সেটাকে বাস্তবে রূপ দিতে সহায়তা করেন আমার সুখ দুঃখের সাথী আমার প্রিয় স্বামী। মনে আছে আমরা দুজন একদিন সারাদিন বৃষ্টিতে ভিজে গাছ রোপণ করেছি। চাকরি সংসার সন্তান নিয়ে ব্যস্ত থাকায় কঠিন কাজ যেমন,গাছে সার দেয়া, মাটি বদলে দেয়া, পানি দেয়া, এসব কাজে কাব্য ও বর্ণের বাবা আমাকে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন ।
এজন্য আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ। প্রচন্ড রকম ভালো লাগা কাজ করে আমাদের ছাদে গেলে, বলতে পারেন মানসিক প্রশান্তি কাজ করে । এছাড়া সবজি চাষ করার পর থেকে আমার বাসায় সবজির চাহিদা ছাদ থেকেই সম্পূর্ণরূপে মেটাতে সক্ষম হচ্ছি। বাগান থেকে উৎপাদিত ফল ও সবজি নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীকে বিতরণ করা যায়, সবচেয়ে বড় কথা ভেজাল মুক্ত ও টাটকা খাবার আমার পরিবার ও সন্তানদের খেতে দিতে পারছি।একটা কথা না বললেই নয় বৃহৎ পরিসরে গাছ লাগানো আমার ম্যারেজ ডে তে কাব্য ও বর্নর বাবাকে সারপ্রাইজ গিফট দেবার উদ্দেশ্যে ছিল এবং ম্যারিজ ডে তে তাকে আমি তা উৎসর্গ করি। ইচ্ছে আছে পরিসরটা আরো বড় করার। সবুজকে ভালোবেসে সবুজের মাঝে থাকতে চাই।
ইসরাত জাহানের ছাদ কৃষি দেখে অনেকেই উৎসাহী হচ্ছেন। পরামর্শ নিচ্ছেন কিভাবে নিজ নিজ ছাদে গড়ে তুলবেন বাগান। যাতে নিজ হাতে তৈরি বাগান থেকে পরিবারের ফল ও সবজির চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়।
প্রতিবেশী মাসেদা আক্তার বলেন, আমার বাসার পাশেই ইসরাত ভাবির বাড়ির ছাদে খুব সুন্দর ছাদ বাগান তৈরি করেছেন। সে যে ভাবে ছাদে বাগান করেছেন তা সত্যিই প্রশংসনিয়। ছাদ বাগান আমার খুব পছন্দ। তার ছাদ কৃষি দেখে আমরা উৎসাহিত হচ্ছি। আমিও চেষ্টা করছি আমাদের বাসার ছাদে এ ধরনের ছাদ বাগান করতে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ছাদ বাগানে অনেক সুবিধা রয়েছে, ছাদে গাছ থাকলে সূর্যের তাপ সরাসরি ছাদে লাগতে পারেনা ফলে রুম ঠান্ডা থাকে। ছাদে ফাঁকা জায়গা না রেখে ইসরাত জাহান ছাদে বিভিন্ন জাতের ফুল, ফল,সবজি ও ঔষধি গাছের চারা দিয়ে অসাধারণ বাগান করেছেন। তার মতো যদি অন্যরাও ছাদগুলো ফেলে না রেখে সবজি অথবা ফলের বাগান করেন তারাও লাভবান হতে পারবেন। যে কেউ ছাদ বাগান করতে চাইলে সব রকম পরামর্শের জন্য আমাদের কাছে আসতে পারে।