বাড়ছে যমুনা নদীর পানি, শুরু হয়েছে ভাঙন


জোয়ারের পানি আসা শুরু হতে না হতেই যমুনায় দেখা দিয়েছে ভয়াবহ নদী ভাঙন। এ ভাঙনের ফলে বর্ষার শুরুতেই যমুনার পেটে যাচ্ছে টাঙ্গাইলের যমুনা তীরবর্তী ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরিভাবে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করলেও তা কতটুকু উপকারে আসবে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন ? এ ভাঙন আতঙ্কে ইতোমধ্যেই গ্রামগুলোর সহস্রাধিক পরিবার অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। ইতোপূর্বেই কয়েক গ্রাম সম্পূর্ণভাবে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। এ ভাঙন থেকে বাঁচানোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এদিকে পাউবো বলছে বড় কাজ শুরু হতে সময় লাগবে তবে আপদকালীন কাজ চলমান রয়েছে।
কথা হয় হালিম শেখের সাথে তার বয়স ৭৫ বছর । তিনি নদীর পাড়ের মানুষ। এখনকার তীরবর্তী থেকে যমুনার ৪ কিলোমিটার ভিতরে তার বসতবাড়ি ছিল। ছয়বার নদী ভাঙনের কবলে পড়েছেন তিনি। এরপরেও তিনি সংসার নিয়ে পুনরায় যমুনা নদীর তীরেই বসবাস করছেন। কোথাও যাবার জায়গা নেই দেখে। যেকোনো সময়ে নদীর তীরে ভেসে যেতে পারেন পরিবারসহ। এমনটাই দুঃখের সাথে বলছিলেন হালিম শেখ।
হালিম শেখের স্ত্রী অজুফা বেগম বলেন, আর কত সহ্য করবো আমাদের এখন আর সহ্য হয়না, সরকার যা দেয় তা চেয়ারম্যান মেম্বারের পকেটে চলে যায়, ছয় বার বাড়ি ভেঙে আনছি এবারো বাড়ি যখন তখন নদীতে চলে যেতে পারে! আমাগো কি টাকা আছে যে প্রতি বছর বাড়ি ভেঙে আনবো, আমাগো সামন্য এই ত্রাণ চাইনা, আমাগোর জন্য সুন্দর একটা বাঁধ নির্মাণ চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটাই আমাগোর দাবি।
নদী ভাঙনে শিকার কুদ্দুস আলী বলেন, জীবন ভরা বাড়ি সরাতে সরাতে কালিহাতি বেলটিয়া আইসা বাড়ি বানাইছি এখান থেকে ১০ কিলোমিটার দুরে বাড়ি ছিলো এখন নদীর ঢালে বাড়ি মনে হয় এই বুঝি নদীতে বাড়ি ভেঙ্গে গেল। সরকার দেশের জন্য অনেক কাজ করছে তাই আমাদের একটাই দাবী বাঁধ চাই। নাহলে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিক। তা নাহলে আমরা আর যাবো কোথায়?
শিক্ষার্থী কাওছার আহমেদ বলেন, বাড়ি আর কতবার সরাবো বাবার না আছে কাজ না আছে কোন জায়গা জমি, যা জমি ছিল সব যমুনায় চলে গেছে এখন দিন এনে দিন খাই, আর সব সময় চিন্তা থাকে কখন বাড়িটি নদীতে ধসে পরে যায়। খুবই অতঙ্কের মধ্যে দিন যাচ্ছে আমাদের।
টাঙ্গাইলের যমুনা নদীর তীব্র ভাঙনে প্রতি বছরই যমুনা পাড়ের মানুষের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায়। জীবন ও জীবিকার তাগিদে সংগ্রামী জীবন তাদের। যমুনা নদীর তীব্র ভাঙনে গৃহহীন হচ্ছে নদীর পূর্ব পাড়ের মানুষ। নদীতে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথেই শতাধিক বড়-ছোট পাঁকা ও আধাপাঁকা স্থাপনাসহ ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আরও তিনশতাধিক ঘরবাড়ি যমুনার ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। গত বছর ২০২০ সালে গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়নের বেলটিয়াবাড়িসহ কয়েকটি গ্রামে তীব্র ভাঙন শুরু হয়। এই ভাঙন এখনও অব্যাহত রয়েছে। এছাড়াও নতুন পানি আসার সাথে সাথে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে টাঙ্গাইল সদরের হুগরা, কাকুয়া, মাহমুদনগর ইউনিয়নে। তাছাড়া নাগরপুর উপজেলার দপ্তিয়র ও সলিমাবাদ ইউনিয়নে এবং ভূঞাপুর উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়নে ভাঙন শুরু হয়ে গেছে। গত কয়েক বছরে যমুনা নদীর ভাঙনে বেশ কয়েকটি গ্রাম মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। এছাড়া প্রতিবছরই নতুন নতুন এলাকায় আঘাত হানছে প্রমত্তা যমুনা। এতে গৃহহীন হচ্ছে শতশত পরিবার। এদিকে যমুনা নদীর অব্যাহত ভাঙন ক্রমশ পূর্বদিকে ধাপিত হচ্ছে। বাড়ি-ঘর, ফসলি জমি হারিয়ে অনেক মানুষ দিশেহারা। অন্যদিকে, মূল নদীতে জেগে উঠছে বিশাল বিশাল চর। সম্প্রতি নদীর মাটি মিশ্রিত জিও ব্যাগে বালি ফেলে বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশটুকুতে মেরামত করতে দেখা গেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের। তবে এতে আসছে বন্যায় কোন উপকারেই আসবেনা সেখানকার মানুষদের।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানান, বেলটিয়া বাড়িতে নদী যখন ভাঙা শুরু হয় তখন ২ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়। কাজ চলমান রয়েছে আশা করি বাধ শেষ হলে আপাতত ভাঙন ঠেকানো সম্ভব। আর অন্যান্য জায়গায় আপদকালীন কাজ করা হবে। এখন যেহেতু বড় প্রজেক্টের তেমন বাজেট নেই, বরাদ্দ নেই তাই এগুলোর কাজ শুরু হতে সময় লাগবে।