হানাদার বাহিনীর হাত থেকে প্রাণে বেঁচে ফেরার বর্ণনা দিলেন বীর বিক্রম আবুল কালাম আজাদ

স্টার্ফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: ০৫:৫৮ পিএম, শনিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২০ | ৭৫৪

স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও দেহ আর মনে মুক্তিযুদ্ধের অসংখ্য স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন এ জেলার অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা। এমন স্মৃতি লালন পালন করাসহ হানাদারদের নির্দয় নির্যাতন আর নিপীড়নের বর্ণণা দিলেন তিন দফায় মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফেরা কাদেরিয়া বাহিনীর যুদ্ধাহত বীরমুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ বীর বিক্রম। 

টাঙ্গাইল করোনেশন ড্রামাটিক ক্লাবে নেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষনের পরপরই বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে দেশ মাতৃকাকে শত্রু মুক্ত করতে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন তারা। যুদ্ধ চলাকালিন সময়ে জেলার অসংখ্য স্থানে পাকহানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন তিনি। 

এরই ধারাবাহিকতায় ৭১’এর ১৭ আগস্ট রাতে তিনি দ্বায়িত্বপান টাঙ্গাইল সদর উপজেলার তারটিয়া ভাতকুড়া এলাকায় একটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ধংসের কাজ। এ কাজে অংশ গ্রহণ করেন তিনি ও নজরুল ইসলাম বাকু নামের আরেক সহযোদ্ধা। তবে বৃষ্টির কারণে ওই বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ধংসে ব্যর্থ হন তারা। রাতে ওই গ্রামের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন তারা। তাদের আশ্রয় নেয়া বাড়িটি ছিল রাজাকারের। ভোরে তারা বাইরে এলে স্থানীয় মোতালেব ড্রাইভার, রশিদ ভেন্ডার ও ঠান্ড বা মন্টু নামের আরো একজন তাদের পিছু নেয় ও পথরোধ করেন। তখন তাদের অবস্থান ছিল তারটিয়া ভাতকুড়া এলাকার ঢাকা রোডে। এর কিছুক্ষণ পরেই তারা দেখে তিন দিক থেকে তাদের ঘিরে ফেলেছেন পাকিস্থান আর্মি, পুলিশ আর রাজাকাররা অবস্থান ছিল নগরজলফৈ ব্রিজ, ভাতকুড়া ব্রিজ আর করটিয়ায় ওই বাহিনীর অবস্থান ছিল। এরপরও টাঙ্গাইল থেকে ফোর্স আনা হয় টাঙ্গাইল থেকেও। এদের সংখ্যা ছিল প্রায় এক থেকে দেড়শ। এ সময় তাদের উপর বৃষ্টির মত গুলি ছুড়তে থাকেন ফিরে ফেলা বাহিনী। এরপরও তারা বিচলিত না হয়ে গ্রেনেড আর গুলি ছুড়ে অবস্থান ত্যাগের চেষ্টা চালান। তবে এরই মধ্যে পাকবাহিনীর ছোড়া একটি গুলির স্পিন্টার তার চোখের নিচে আর একটি গুলি লাগে পায়ে। এতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরতেই দেখেন পাকবাহিনীর সদস্যরা তাকে ঘিরে ফেলেছে। এ অবস্থাতেও তারা তার উপর চালাতে শুরু করে রাইফেলের বাড়ি আর বুটের লাথি। ওই স্থানের খালের উপর পরে থাকা গুলিবিদ্ধ সহযোদ্ধা নজরুল ইসলাম বাকুর কাছে নিয়ে যায় তাকে। এরপরও থানাপাড়ার ইকবাল নামের এক রাজাকার গুলিবিদ্ধ বাকুর উপর নয়টি গুলি চালায় ও তার বুকে রাইফেল তাক করে।  

তিনি বলেন, ছাত্রলীগের রাজনীতি করার কারণে অনেকেই তাকে চিনতেন। এ সময় রাজাকার সদস্যদের করটিয়ার সা’দত কলেজে পড়–য়া এক ছাত্র ওইস্থানে থাকা পাকিস্থান আর্মির একজন ক্যাপ্টেনকে বললো ওর কাছ থেকে তথ্য বের করা যাবে, তাই ওকে এখনই মারার দরকার নেই। এ কারণে ওখানে আমাকে না মেরে আনা হলো সার্টিক হাউসে এরপর থানায়। আটক থাকা দুইদিনে আমার উপর চালানো হয় অমানসিক নির্যাতন। 

এরপর ১৯ আগস্ট ভোর বেলায় দ্বিতীয় দফায় আবার আমাকে মেরে ফেলার জন্য নেয়া হয় বদ্ধভূমিতে। তবে এ সময় সার্কিট হাউসে উপস্থিত হন বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা ও সিএনএন এর সাংবাদিকরা। এ কারণে তাকে বদ্ধভূমি থেকে সার্কিট হাউসে ফেরত নেয়ার আদেশ দেন পাকিস্থান আর্মির একজন কর্নেল। সার্কিট হাউসে উপস্থিত ওই সাংবাদিকরা আমাকে অস্ত্রসহ আটকের তথ্য সংগ্রহ করাসহ আমার ভিডিও ধারণ করেন। এর ফলে দ্বিতীয় বার বেঁচে যাই আমি। তবে এরপরও আমাকে ছেড়ে না দিয়ে নেয়া হয় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে। সেখানেও চলতে থাকে ধারাবাহিক নির্যাতন। মাঝপথে নেয়া হলো ক্যান্টনমেন্টের সাইনালি ইন্টারগেশন ইউনিটে। যেখান থেকে কেউ কখনও জীবিত ফেরেনি। ক্যান্টনমেন্টের সাইনালি ইন্টারগেশন ইউনিটে আমাকে ইন্ডিয়ার চর বানানোর চেষ্টা চালায় পাকিস্থানী আর্মিরা। তারা আমাকে ভারতীয় সেনা সাজিয়ে পাকিস্থানী আর্মির সাথে যুদ্ধ লিপ্ত হয়েছি এমনটা সাজানোর চেষ্টায় জিজ্ঞাসাবাদ চালাতে শুরু করেন। এই জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালে তারা একটি পেপারে আমাকে স্বাক্ষর দিতে বলেন। তবে ইতোপূর্বে আমি ইন্টারগেশন করায় ওই পেপারে স্বাক্ষর দেয় নাই। এ কারণে তারা আমাকে নিচ দিকে ঝুলিয়ে আমার দুই পায়ের পাতা দিয়ে গরম লোহার রড ঢুকিয়ে নির্যাতন শুরু করে। এ নির্যাতন চলাকালে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলায় কিছু স্মরণে নেই। জ্ঞান ফেরার পর দেখি আবার আমাকে আনা হয়েছে ক্যান্টনমেন্ট সেলে। এ সময় ক্যান্টনমেন্ট সেলে আটক বন্দিরা তাকে জানায় সাইনালি ইন্টারগেশন ইউনিটে গিয়ে কেউ আর জীবিত ফিরে আসে না। তবে সেখান থেকে আমি আর আরেকটি যুবক জীবিত ফিরে আসি।

পাকিস্থানী আর্মির সাইনালি ইন্টারগেশন ইউনিট সম্পর্কে তিনি বলেন, দশ বার ফিট প্রসস্থের ওই ঘরে বৈদ্যুতিক চুলাস