জনবল ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সঙ্কটে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে


গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দিচ্ছে মাত্র ৮ জন চিকিৎসক। জনবল ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সঙ্কটে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা। এতে সরকারী চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কালিয়াকৈর উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৬৪ সালে কালিয়াকৈর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শ্রীফলতলী জমিদার বাড়ির পাশে জমিদারের দান করা জমিতে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়। ২০১২ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নিত করা হয়। তবে চাহিদা অনুযায়ী জনবল নিয়োগ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ না করায় কোনমতে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে হাসপাতালটি।
অপরদিকে ৩১ শয্যা বিশিষ্ঠ হাসপাতালটির জন্য ২০জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও চিকিৎসক আছেন মাত্র ৮ জন। এর মধ্যে জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), মেডিকেল অফিসার, মেডিকেল অফিসার কালিয়াকৈর বাজার, সহকারী সার্জন চাপাইর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ ৪ জন চিকিৎসকের পদই শূন্য রয়েছে। ৬ জন চিকিৎসক প্রেষণে আছেন। তারা হলেন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি) ডা. সঞ্চিতা ভৌমিক, চাবাগান উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এমও ডা. গাজী মাহাবুব রহমান, এমও (ইউনানি) ডা. ইসরাত জাহান, সহকারী সার্জন ডা. তাসনুভা জাহান, সহকারী সার্জন ডা. শরিফুন নাহার, সহকারী সার্জন ডা. আ.ন.ম মাইনুল কুদ্দুস।
এছাড়া জুনিয়র কনসালটেন্ট এ্যানেসঃ ডা. এম এম আব্দুল ওয়াদুদ ও এমও ডা. আবুল খায়ের সালাউদ্দিন ভুঁইয়া দীর্ঘদিন ধরে বিনা অনুমতিতেই অনুপস্থিত আছেন। ওই দু'জনের নামে বিভাগীয় মামলা রয়েছে। বর্তমানে মাত্র ৮ জন চিকিৎসক দিয়ে ধুঁকে ধুঁকে চলছে এ হাসপাতালের কার্যক্রম। এদের মধ্যেও ডেঅফ, ছুটি, ট্রেনিং, রাতে ও দুপুরের ডিউটি থাকেন। এত অল্প সংখ্যক চিকিৎসকের পক্ষে সাড়ে তিন লাখ জনসংখ্যা অধ্যূশিত এলাকায় এতো বেশি রোগী দেখা সম্ভব হয় না।
এবিষয়ে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. নাজমুন নাহারের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি যথাসম্ভব সময় মতো হাসপাতালে উপস্থিত থাকার চেষ্টা করি এবং আরএমও হিসেবে আমার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে যাচ্ছি।
করোনাকালীন সময় টিএস স্যার আক্রান্ত থাকায় হাসপাতালের সকল কাজ জীবনের ঝুঁকি নিয়েই আমি তা নিষ্ঠার সাথে পালন করেছি ,এখনো করছি। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হাসপাতালে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও কয়েকজন চিকিৎসক তা মানছেন না। ইচ্ছামতো তারা তাদের কর্মস্থলে যাতায়াত করছেন। অপরদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ কয়েকজন চিকিৎসক স্থানীয় কারখানা ও বিভিন্ন ক্লিনিকে চেম্বার করেন। টিএইচ চেম্বারে যাতায়াত করতে হাসপাতালের সরকারী গাড়ী ব্যবহার করছেন অভিযোগ রয়েছে।
হাসপাতালে আগত রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না দিয়ে তাদের পছন্দের ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেন বলে ভুক্তভোগী রোগীদের কাছ থেকে জানা যায়।এছাড়া ওই হাসপাতালের এক মাত্র এক্সরে মেশিনটি ২ বছরের বেশি সময় ধরে অকেজো হয়ে আছে। তা মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেই। এসব কারণে রোগীদের চিকিৎসা খরচ বেশি হওয়ায় তারা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. প্রবীর কুমার সরকারের অবহেলা ও অসৎ উদ্দেশ্যের কারণেই হাসপাতালের এমন নাজুক অবস্থা বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের স্টাফরা জানান। অপরদিকে ডা: প্রবীর কুমারের বাড়ি হাসপাতাল থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দুরে হওয়ায় তিনি কয়েকজন চিকিৎসককে অতিরিক্ত সুযোগ সুবিধা দিয়ে নিজে যাচ্ছেতাই ভাবে চালাচ্ছেন হাসপাতাল। তিনি স্থানীয় লোক হওয়ায় তার অনিয়ম, দুর্নীতি, ডাক্তার ও স্বাস্থ্য কর্মীদের নিকট থেকে কমিশন বানিজ্য দেখলেও কেউ কিছু বলে না। ডা: প্রবীর একজন নন ক্যাডার এডহক নিয়োগপ্রাপ্ত ডাক্তার হয়েও বিসিএস ক্যাডারের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার পদ দখল করে আছেন কয়েক বছর ধরে।
অথচ বোর্ডে তার নামের পাশে ভারপ্রাপ্ত ব্যবহার না করে মানুষকে ধোকা দিচ্ছেন। হাসপাতালের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডে অনিয়ম, ভবন সংস্কার না করেই টাকা আত্মসাৎ, খাবার সরবরাহের জন্য ঠিকাদার নিয়োগে কমিশনের বিনিময়ে তার ঘনিষ্ঠজনকে দেয়া, হাসপাতালের গাড়ী নিজের চেম্বারের কাজে ব্যবহার , বাচ্চাদের স্কুলে আনা নেয়াসহ নানা অনিয়ম ও সেচ্ছাচারিতার অভিযোগ রয়েছে ডাঃ প্রবীর কুমারের বিরুদ্ধে। হাসপাতালের এম্বুলেন্সের ড্রাইভারকে নিজের গাড়ী চালনার জন্য ব্যবহার করেন, এতে জরুরী প্রয়োজনে এম্বুলেন্স সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সরকারি কেয়ার্টার বরাদ্দের ক্ষেত্রেও অনিয়ম করছেন ডাঃ প্রবীর। তার নিজের নামে সরকারি কোর্য়াটার বরাদ্দ নেই, অথচ কোয়ার্টারে থাকতে দিচ্ছেন ডাঃ শাহানাজ পারভীন নামে এক ডাক্তাকে , যার পোষ্টিং টঙ্গীতে।
ডাঃ প্রবীর কুমার ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার কর্মকর্তা পদে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে, সেদিকে তার কোন নজর নেই। জরুরী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাক্তার সাধারণ মানুষের সাথে অর্থের বিনিময়ে চুক্তিভিত্তিক কাজ করার অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালে দুটি আলট্রাসাউন্ড ম্যাশিন থাকলেও তা ব্যবহার না করে রুগি পাঠান নিজস্ব চেম্বারে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. প্রবীর কুমার সরকার নিজের দোষ অস্বীকার করে বলেন, ৫০ শয্যা হলেও ৩১ শয্যার জনবল দিয়েই চলছে হাসপাতালটি। এরমধ্যে ৪টি পদ শূন্য, ৬ জন প্রেষণে, ২ জন অনুনোমদিত অনুপস্থিত রয়েছে। তাদের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বর্তমানে মাত্র ৮ চিকিৎসক দিয়ে ৫০ শয্যার হাসপাতাল চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।