অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ ও নির্যাতনের অভিযোগে মামলা


শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার বহুল আলোচিত ও বির্তকিত ঝিনাইগাতী আদর্শ মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মুহাম্মদ খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন, বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ ও নির্যাতনের শিকার অসহায় বিধবা নারী ছবিরনের পরিবার।
গত ২০ জুলাই শেরপুরের সিআর আমলী আদালতে বিধবা ছবিরনের ছেলে সোহেল মিয়া(২৫) বাদী হয়ে অধ্যক্ষ মুহাম্মদ খলিলুর রহমান(৪৮), তার স্ত্রী মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা(৪০) এবং অত্র কলেজের কম্পিউটার প্রভাষক ভাগিনা মুহাম্মদ মোখলেছুর রহমান(৩৮)কে স্বনামে এবং অজ্ঞাতনামা ১০/১২জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।
উক্ত মামলাটি মহামান্য আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারিন ফারহানা তা আমলে নিয়ে ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করে আগামী ৬আগষ্টের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য পিবিআই’র জামালপুর অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার আর্জির সূত্রে জানা যায়, উপজেলার তামাগাঁও গ্রামের মৃত হায়দার আলীর স্ত্রী ছবিরন নেছা(৫০) রেকডিও ১০শতাংশ জমি ক্রয় করে উক্ত জমিতে ২টি ঘর নির্মাণ করে অসুস্থ স্বামীসহ ৩নাবালক পুত্রদের নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। সে সময়ে বর্তমান এ কলেজের কোন অতিস্তই ছিলনা। কিন্তু কলেজটি প্রতিষ্টার পর থেকেই চতুর অধ্যক্ষ খলিলের কু-নজর পড়ে ছবিরনের বসতভিটার প্রতি।
প্রথমে অধ্যক্ষ খলিল ছবিরনকে জমিটুকু কলেজের কাছে বিক্রি করার প্রস্তাব দিলে ছবিরন এক কথাই না করে দেন। পরবর্তীতে ছবিরনের কনিষ্ঠ পুত্র শরাফতকে উক্ত কলেজের অফিস সহকারী পদে চাকুরী দেওয়ার লোভ দেখিয়ে ছবিরনের কাছ থেকে নগত ১লক্ষ টাকা গ্রহন করেও ছবিরনের ছেলে শরাফতকে চাকুরি না দিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অন্যজনকে নিয়োগ দেয়। এরপর অধ্যক্ষ খলিল অসহায় ওই পরিবারটিকে বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করতে শুরু করে নানান ষড়যন্ত্র। অভাব অনটন আর দারিদ্রতার মধ্যে দিয়েই মৃতে্যুবরণ করেন ছবিরনের স্বামী হায়দার আলী। স্বামীর মৃতে্যুর পর ছবিরনের পরিবারটি আরোও অসহায় হয়ে পড়ে।
এমন পরিস্থিতিতে গত ২০১৮সালের ১৫ফেব্রুয়ারীর সকালে বিধবা ছবিরনকে বাড়ীতে একা পেয়ে অধ্যক্ষ খলিলুর রহমান, তার স্ত্রী মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা, কম্পিউটার প্রভাষক মোখলেছুর রহমানসহ কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের উস্কে দিয়ে ছবিরনের পরিবারকে তাদের বসতভিটা থেকে উচ্ছেদের পায়তারা করে। অসহায় ও বিধবা ছবিরন তার শেষ সম্ভব বসতভিটাকে বাচাঁতে একাই তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ালে অধ্যক্ষ খলিলের নির্দেশে ছবিরনের বসতবাাঢ়ীর একটি কাঠাল গাছের সাথে ছবিরনকে বেঁধে শারিরীক ভাবে নির্যাতন চালায়।
খবর পেয়ে ছবিরনের ছেলে সোহেল মিয়া ছুটে আসে বসতবাড়ী ও তার বিধবা মা’কে বাঁচাতে। এদিকে চতুর অধ্যক্ষ খলিল থানা পুলিশকে ডেকে এনে ছবিরন ও তার ছেলে সোহেল মিয়াকে পুলিশের কাছে তুলে দেয় এবং পরের দিন ছবিরণ ও তার ছেলেসহ ৬আত্মীয়দের নামে একটি মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদেরকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। ছবিরন ও তার ছেলে জেল হাজতে এবং অন্যরা পতালতক থাকার সুযোগে অধ্যক্ষ খলিল ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা ছবিরনের বসতবাড়ীরর ২টি ঘরের মালামাল লুটপাট করে এবং বাড়ীটির সমস্ত নাম-নিশানা মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে বিধবার ওই জমিটুকু কলেজের ভিতরে ফেলে প্রাচীর নির্মাণ করে কলেজের দখলে নিয়ে আত্মসাৎ করে।
অপরদিকে দীর্ঘ ১৪দিন জেল খাটার পর ছবিরন ও তার ছেলে সোহেল এবং অন্য ৪ আসামী স্বেচ্ছায় আদালতে হাজিরা দিয়ে জামিনে মুক্তি পেয়ে ফিরে আসেন নিজেদের বসতভিটায়। গ্রামে এসে তাদের বসতবাড়ীর কোন নাম-নিশানা দেখতে না পেয়ে বিধবা ছবিরন হতবাক হয়ে যান। মানুষিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ে পরিবারটি। এমতাবস্থায় বসতবাড়ীটি ফিরে পেতে প্রভাবশালী মহল, জনপ্রতিনিধি, থানা পুলিশ ও সমাজ পতিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন ন্যায় বিচারের আশায়। কোন পদক্ষেপ নেইনি সমাজের বিবেকবান কোন ব্যক্তি বা প্রশাসন। বরঞ্চ অধ্যক্ষ খলিলকে প্রকাশ্যে ও গোপনে তার সকল অপকর্মের সহযোগীতাই করেছেন।
এদিকে অধ্যক্ষ খলিলের সীমাহীন অনিয়ম- দুর্নীতি, জাল-জালিয়াতি, নিয়োগ বাণিজ্যে এবং এমপিও বঞ্চিত ২জন শিক্ষকের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে শেরপুরের জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুবেব নির্দেশে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) রুবেল মাহমুদ গত ৯জুলাই/২০ইং তারিখে পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন। তদন্তে চতুর অধ্যক্ষ মুহাম্মদ খলিলুর রহমান তদন্ত কমিটিকে চুরির নাটক দেখিয়ে তদন্ত কমিটির সন্মুখে গুরুত্বপূর্ণ কোন নথিই উপস্থাপন করতে পারেন নাই। এসময় তদন্ত কমিটির প্রধান ইউএনও রুবেল মাহমুদ সাবেক ও বর্তমান গভর্নিং বডির সভাপতিসহ কর্মকর্তা, কর্মচারী, ও এলাকার সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গের অনেককেই মৌখিক ও লিখিত ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত আছে বলে জানালেন ইউএনও রুবেল মাহমুদ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা এ প্রতিনিধিকে জানান, তদন্তকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে এবং নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে অধ্যক্ষ মুহাম্মদ খলিলুর রহমান উপর মহলে দৌড়-ঝাপ করছেন।
এদিকে মামলার বাদী বিধবা ছবিরনের ছেলে সোহেল মিয়া বলেন, “অধ্যক্ষ খলিল অন্যায় ভাবে আমাদের শেষ সম্ভল বসতভিটাটুকু গ্রাস করেই ক্ষান্ত হননি, আমাদের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা দিয়ে দিয়েছিল, তা আজও অব্যাহত আছে, প্রতিনিয়ত আমাদের এ মামলায় হাজিরা দিতে হচ্ছে। অথচ আমার বৃদ্ধ মা’কে গাছের সাথে বেধেঁ রেখে নির্যাতন করেছে, মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলা খাটিয়েছে, আমাদের বসতবাড়ী গ্রাস করেছে। আমি ভুক্তভোগী ও অসহায় পরিবারের পক্ষে মাননীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে এসবের ন্যায় বিচারের দাবী জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য যে, উপজেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ ফোরামে প্রকাশ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কটুক্তিকারী, জামায়াত সমর্থক, চতুর ও দুর্নীতিপরায়ন এই অধ্যক্ষ মুহাম্মদ খলিলুর রহমানের ইতিপূর্বে তার বিভিন্ন অপকর্মের পৃষ্টপোষকতা যারা করেছেন, তারাসহ উপজেলার সর্বস্তরের জনসাধরণের দাবী উঠেছে বির্তকিত এই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগের বিভাগীয় তদন্ত।