সমুদ্রে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় আম্ফান আতঙ্কে উপকূলের কয়েক লক্ষ মানুষ

কামরুজ্জামান শাহীন
প্রকাশিত: ০৯:০২ পিএম, সোমবার, ১৮ মে ২০২০ | ৪৫৯

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আতঙ্কে ভোলার উপকূলের মানুষ, একদিকে কয়েক মাস ধরে করোনার আতঙ্কে রয়েছে উপকূলের মানুষ। এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে ভোলায় ৭ নং মহাবিপদ সংকেত জারী করা হয়েছে। এখন উপকূলের মানুষ দূরচিন্তায় রয়েছেন।

ঢালচরের মেঘনা পাড়ের বাসিন্দা জসিম জানান, মেঘনার ভাঙ্গনে কয়েক বার ভিটে বাড়ি বিলিন হয়ে গেছে। আবার নতুন করে তুলছি, এখন শুনলাম আম্ফান নামে ঘূর্ণিঝড় আসছে। তার প্রশ্ন আমরা এহন কি করুম। করোনার ভয়ের মধ্য যদি আবার এই ঝড় শুরু হয় তাহলে আমাদের কী কোনো উপায় থাকবে। আমরা গরিব মানুষ। আমাদের কী হবে।

এভাবেই ঝড় নিয়ে দুশ্চিন্তার কথাগুলো জানিয়েছিলের নদী ভাঙ্গা জসিম নামের এই অভাবী বাসিন্দা।
ভোলা সদর তুলাতলীর মেঘনা পাড়ের আযাহার আলী বলেন, করোনার কারণে অসহায় অবস্থায় মধ্যে দিন কাটাতেছি, এর মধ্যে আবার ঘূর্ণিঝড় এলে তো আরো ভয় বেড়ে যাবে। ঝড়ে ক্ষতি হলে আমরা কীভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে থাকবো,কি ভাবে চলবে আমাদের দিন।

শুধু আযাহার মিয়া কিংবা জসিম নয়, তাদের মত অনেকেই এখন ঝড় নিয়ে দূশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন।
করোনা ভাইরাসের মধ্যেই ঘূর্ণিঝড় আম্ফান নিয়ে সংকটে পড়েছেন ভোলার উপকূলের মানুষ। ঝড়ের আগাম বার্তা পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই কর্মহীন এসব মানুষ যেন অজানা আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছেন।

নিরাপদ আশ্রয় কিংবা জীবন বাঁচানোর চিন্তা না করে তারা নিজেদের বসতঘর আর সম্পদ রক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। ঝড়ে না জানি কি হয়, এমন চিন্তার তাদের চোখ-মুখে হতাশা।

এদিকে ঝড় মোকাবিলায় ৩টি ধাপে প্রস্তুতি নিয়েছে ভোলা জেলা প্রশাসন। ঘূর্ণিঝড়ের আগে, ঝড়ের সময় এবং ঝড় পরবর্তী সময়ে করণীয় বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জেলা প্রশাসনে পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।।
জানাযায়, ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া পাড়ে বাঁধে আশ্রিত এবং ভূ-খ- থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপচরের বেশিরভাগ মানুষ দারিদ্রতার সঙ্গেই লড়াই করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে কর্মহীন হয়ে পড়ে কষ্টে দিন পার করছিলেন এসব পরিবার। যদিও তাদের মধ্যে কেউ কেউ সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ পাচ্ছেন।
কিন্তু মহামারি করোনার সেই দূর্যোগ কাটিয়ে না উঠতেই ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পূর্বাভাস উপকূলবাসীকে ভাবিয়ে তুলেছে।

নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রের চেয়েও বসতভিটা আর সম্পদ রক্ষা নিয়েই চিন্তিত বেশিরভাগ উপকূলের মানুষ। আতঙ্ক-উৎকণ্ঠায় মধ্যে কাটছে তাদের দিনানিপাত।

ভোলা মানিকা এলাকার দরিদ্র পরিবারের সন্তান আছমা জানান, ঝড়ের কথা শুনেছি, আমরা ভয়ের মধ্যে বসবাস করছি। যদিও করোনার কারণে কষ্টে দিন কাটছে, বেশি কিছু হলে আশ্রয় কেন্দ্রে যাবো কিন্তু ঝড়ে যদি ঘর ভেঙে যায়, তাহলে কোথায় সন্তানদেও নিয়ে আশ্রয় নেব।

ভোলা চরফ্যাশনের বাঁধের পাশে আশ্রিত একটি অসহায় পরিবার জানায়, আমরা নদীর কূলে থাকি, সামান্য বাতাস হলেই ঘর নড়বড়ে হয়ে ওঠে, ঝড় হলে তো পুরোটাই ভেঙে যাবে। ঝড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে নিজেদের রক্ষার করলেও বসতঘর রক্ষা করবো কীভাবে।

এদিকে ঝড়ের প্রভাবে অশান্ত হয়ে উঠেছে ভোলার নদী-নদীগুলো পানি। জেলা প্রশাসন জানান, শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করে মানুষকে রাখার জন্য আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১ হাজারের বেশি সাইক্লোন সেল্টার রয়েছে। সেগুলোতে চলছে পরিচ্ছন্নতার কাজ।

মনপুরা এলাকার একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক বলেন, আমাদের বিদ্যালয়টি আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার হচ্ছে, এখানে আশ্রয় নিতে মানুষ আসে, তাই ঝড়ের খবর পেয়ে আমরা স্কুল ভবনটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছি। যাতে আশ্রয় নেওয়া মানুষের কোনো অসুবিধা না হয়।

ভোলা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক জানান,ঝড় মোকাবিলা আর উপকূলের বাসিন্দাদের নিরাপদে আনতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, করোনার কারণে আশ্রয় কেন্দ্রে যাতে মানুষের শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত হয় সে জন্য ১১০৪টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে আনতে কাজ করছে সিপিপিসহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ উপজেলা প্রশাসন, নির্বাহী কর্মকর্তা, ইউনিয়ন পরিষদ সবাই একযোগে কাজ শুরু করেছে।

আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উপকূলের সব বাসিন্দারের নিরাপদে আনতে চাই। সেই লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়াও মেডিক্যাল টিম ও কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। জেলা পুলিশ, নৌ পুলিশ, নৌ বাহিনী ও কোস্টগার্ডের সহায়তায় ঝূঁকিপূর্ণ ও উপকূলীয় এলাকা থেকে মানুষকে সরিয়ে আনা হচ্ছে।

এছাড়াও আশ্রয় নেওয়া বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী, অন্তঃসত্ত্বা নারী ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য আলাদা টিম গঠন করেছি, তারা তাদের যতœ করবে। ইতোমধ্যে কয়েক দফা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।