কোয়ারেন্টিনে তাবলিগের ৪৭ জন
টাঙ্গাইলে গার্মেন্টসকর্মী করোনায় আক্রান্ত

অবশেষে সন্ধান মিলেছে টাঙ্গাইলে করোনা আক্রান্ত আরেক ব্যক্তির। এ ঘটনায় ওই ব্যক্তির গ্রাম লকডাউন ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন।
ঘাটাইল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
করোনায় আক্রান্ত ওই ব্যক্তির নাম মহিউদ্দিন (৪০) ওরফে সালাম। তিনি পেশায় গার্মেন্টসকর্মী। তার বাড়ি ঘাটাইল উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের গোড়ার দেউলী পশ্চিমপাড়া গ্রামে।
উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার সরকার জানান, গাজীপুরের একটি কারখানায় কাজ করতো মহিউদ্দিন। কাজের সুবাধে সে দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকাতে বসবাস করতো। গাজীপুরে থাকাবস্থায় কয়েকদিন আগে সে জ্বর-সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত হলে ঢাকায় আইইডিসিআরে তার নমুনা পরীক্ষা করায়। এতে তার করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে।
তিনি আরোও জানান, মহিউদ্দিন বিষয়টি জানতে পেওে গত বুধবার নিজ বাড়ি ঘাটাইল উপজেলা রসুলপুর ইউনিয়নের গোড়ার দেউলি পশ্চিম পাড়া এসে মোবাইল বন্ধ রেখে দেয়। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে তার খোঁজ নিয়ে বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল টাঙ্গাইলে দুই করোনা রোগী সনাক্তের কথা জানায় আইইডিসিআর। কিন্তু গত ৭ তারিখে মির্জাপুরে এক স্বাস্থ্যকর্মীর করোনা সনাক্ত ছাড়া দ্বিতীয় আক্রান্ত ব্যক্তির কোনো তথ্য ছিলো না জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে।
জেলা থেকে পাঠানো করোনা নমুনার সব রিপোর্ট নেগেটিভ আসায় আক্রান্ত ব্যক্তির পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশায় ছিল স্বাস্থ্য বিভাগ। গত শুক্রবার দুপুরে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে আইইডিসিআর থেকে সেই ব্যক্তির নাম, উপজেলা আর মোবাইল নাম্বার দেওয়া হলে সেই ব্যক্তির সন্ধানে নামে উপজেলা প্রশাসন। দীর্ঘ চেষ্টার পর মোবাইল ট্র্যাকিং প্রযুক্তির মাধ্যমে তাকে খুঁজে বের করা হয়।
অপরদিকে টাঙ্গাইলের বাসাইলে তাবলিগ ফেরত ৪৭ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। শুক্রবার (১০ এপ্রিল) সকালে তাদেরকে বাসাইল ডিগ্রি কলেজে গঠিত কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়।
জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে জোবায়েরপন্থী ও সাদপন্থী বিভিন্ন বয়সের শতাধিক ব্যক্তি ৬টি গ্রুপ করে খাগড়াছড়ি, ভোলা, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় তাবলিগ জামায়াতে যায়। এদের মধ্যে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সকালে নুরুল ইসলাম, তালহা ও আব্দুল ওয়াজেদের নেতৃত্বে থাকা তিনটি গ্রুপের ৪৭জন তাবলিগ থেকে ফিরেন।
পরে তাদেরকে বাসাইল ডিগ্রি কলেজে গঠিত প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। তারা বাসাইল পৌরসভা, কাউলজানী ও হাবলা ইউনিয়নের বাসিন্দা। এর সপ্তাহ খানেক আগে উপজেলার কাউলজানী ইউনিয়নের আব্দুল গনি, কাশিল ইউনিয়নের আব্দুল বছির মিয়া ও ফুলকী ইউনিয়নের জয়নাল মিয়ার নেতৃত্বে আরও তিনটি গ্রুপের প্রায় ৬০জন তাবলিগ থেকে ফিরে বাড়িতে চলে যান। তারা বর্তমানে যার যার বাড়িতে অবস্থান করছে। তাদের ব্যাপারে এখনও কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি উপজেলা প্রশাসন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফিরোজুর রহমান বলেন, ‘তাবলিগ জামায়াতের তিনটি গ্রুপের ৪৭জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। জানতে পেরেছি কয়েকদিন আগে আরও তিনটি গ্রুপ তাবলিগ জামায়াত থেকে ফিরেছেন। তাদেরকে হোম কোয়ারেন্টিনের রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামছুন নাহার স্বপ্না বলেন, ‘এ পর্যন্ত তাবলিগ জামায়াতের তিনটি গ্রুপের ৪৭জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এছাড়াও সম্প্রতি আরও কোন তাবলিগ জামায়াতের গ্রুপ ফিরেছেন কিনা বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়াও কেউ যদি হোম কোয়ারেন্টিন না মানেন তাদেরকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে।’