মির্জাপুরে ইটভাটা নির্মাণের হিরিক

তিন ফসলী জমিকে এক ফসলী বলে প্রত্যয়ন

মির্জাপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৪:২৩ পিএম, রোববার, ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ | ১৫৪৬

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে তিন ফসলী জমি হলেও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জমিগুলো এক ফসলী বলে প্রত্যয়ন দেয়া হয়েছে। আর সেই সুজোগকে কাজে লাগিয়ে উপজেলার মীর দেওহাটা ও কোট বহুরিয়া এলাকায় ফসলী কৃষি জমিতে ইটাভাটা গড়ে উঠার হিরিক পড়েছে বলে সরেজমিনে খোজ নিয়ে দেখা গেছে।

এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ওই এলাকায় মাত্র এক কিলোমিটারের মধ্যে কমপক্ষে ২০টি ভাটা অবস্থিত। প্রায় পাঁচ বছর আগে থেকে ওই এলাকায় ভাটা স্থাপন শুরু হয়। যা পর্যায়ক্রমে বাড়তে থাকে। চলতি বছর মীর দেওহাটাতে ষ্টাইল ব্রিকসসহ শরিফ-হযরত ব্রিকস, রমিজ ব্রিকস, আল হাদী ব্রিকস, সরকার ব্রিকস ও এসএমবি ব্রিকস স্থাপিত হয়।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ অনুযায়ী, কৃষিজমিতে ইটভাটা স্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ ছাড়া আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এক কিলোমিটার এবং ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়ক থেকে অন্তত আধা কিলোমিটারের মধ্যে ভাটা করা যাবে না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নির্মিত মির্জাপুরের দেওহাটা-বহুরিয়া সড়কের দুই পাশে ভাটাগুলো নির্মিত। ওই রাস্তায় ভাটায় মাটি নেয়া ও ভাটা থেকে ইট বিক্রি করতে মাটি ও ইট বহনকারী ভারী ট্রাক চলাচল করে। ফলে রাস্তাটির অধিকাংশ স্থানে ভেঙে গেছে। কয়েকটি ভাটার সাথেই রয়েছে সরিষা, ঘাটি ও সবজি খেত। ভাটার ধোয়ার কারণে খেতের ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন কৃষকেরা। ভাটায় কয়লার পাশাপাশি কাঠও পোড়ানো হচ্ছে।

কোট বহুরিয়া গ্রামের সমেজ উদ্দিন (৫৫) ও তমিজ উদ্দিন (৬০) সহ অনেকেই জানান, ওই এলাকার সবগুলো জমি তিন ফসলী। প্রতি বছরই তারা সেখানে সরিষা, ধান ও পাট বুনেন। কিন্তু ভাটার কারণে ঠিকমত ধান ঘরে তুলতে পারেননা। আগে যেখানে প্রতি পাখিতে ৪০-৪৫ মন ধান পাওয়া যেত সেখানে এখন ২৫-৩০ মন ধান পাওয়া যায়। ভাটার কারণে গাছপালায় ফল ধরেনা। টিনের চালে মরিচা ধরেছে।

শরিফ-হযরত ব্রিকস এর মালিক ইউসুফ আলী সিকদারের ভাই নুরুল ইসলাম সিকদার জানান, কৃষি অফিস থেকে জমিগুলো এক ফসলী বলে প্রত্যয়ন দেয়া হয়েছে। তারা প্রায় ১৫ দিন আগে থেকে ইট পুড়ানো শুরু করেছেন।

কোট বহুরিয়া এলাকার এফবিসি-২ ভাটার মালিক ফজলুর রহমান তাঁর ভাটাটি অনুমোদিত দাবী করলেও কোন কাগজ দেখাতে পারেননি। তিনি জানান, তাঁরসহ স্থানীয় অধিকাংশ ভাটার সব কাগজ পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জমা রয়েছে। একই কথা জানান স্ট্রাইল ব্রিকস এর মালিক সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল হাই।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ আরিফুর রহমান তাঁর দেওয়া প্রত্যয়নের সবগুলো জমি এক ফসলী দাবী করেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ডিডি মুহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম জানান, কৃষি কর্মকর্তার প্রত্যয়নের ভিত্তিতে ওই এলাকায় ভাটা স্থাপনের জন্য পরিবেশ ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।

টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারি কমিশনার রেজা মো: গোলাম মাসুম প্রধান জানান, এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।