নাটোরের গ্রামীণ জনপদ মূল্যবান খয়ের গাছে সুশোভিত

ফিরোজ আহমেদ,নাটোর
প্রকাশিত: ১২:২৪ পিএম, রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০১৯ | ৬৬৬

নাটোরের গ্রামীণ জনপদ মূল্যবান খয়ের গাছে সুশোভিত হয়ে উঠেছে। অপার সম্ভাবনাময় খয়ের গাছের বহুমুখী ব্যবহারের মধ্যে খয়ের তৈরী, উৎপন্ন লাহ্মা থেকে রঞ্জক, গাছের ডাল পার্চিং এবং গাছ টেকসই খুঁটি হিসেবে ব্যবহার অন্যতম। খয়ের গাছের পরিধি বাড়াতে পারলে সমৃদ্ধ হবে দেশের কৃষি, চিনি শিল্প,বস্ত্র আর আর চামড়া খাত।

সারা জেলার গ্রামাঞ্চলে খয়ের গাছ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও লালপুর আর বড়াইগ্রাম উপজেলা খয়ের গাছের সমৃদ্ধ জনপদ। বড়াইগ্রামের কালিকাপুর, হারোয়া ও বনপাড়া সংলগ্ন বিভিন্ন স্থানে, লালপুরের ওয়ালিয়া, কেশবপুর এলাকায় রয়েছে দেড় দশকের পুরনো গাছ। তবে সবচে’ সুশোভিত এলাকা লালপুরের লালপুর-বাঘা সড়কের পাইকপাড়া এলাকার প্রায় তিন কিলোমিটার সড়ক। রাস্তার উভয়পাশে দল বেধে থাকা প্রায় তিন হাজার গাছের ঝিরিঝিরি পাতা মন কাড়ে পথিকের।

রাস্তার দুই ধারে লাগানো গাছগুলো পরিপক্ক হবার পথে। গাছের যত্নে তৎপর উপকারভোগী গ্রুপগুলো। পাইকপাড়া এলাকার উপকারভোগী গ্রুপের প্রধান মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, গাছের গোড়ায় আগাছা নিধনসহ গাছের ডাল ছেটে গাছগুলো নিয়মিত পরিচর্যা করা হয়। মূল্যবান এই গাছের সুফল আমাদের উৎসাহিত করে। 

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১০-২০১১ এবং ২০১১-২০১২ অর্থ বছরে বন বিভাগের সামজিক বনায়ন কর্মসূচীর আওতায় সারাদেশে খয়ের গাছের চারা রোপন করা হয়। ঐসময় বন বিভাগের রেঞ্জগুলোতে খয়ের গাছের চারা তৈরী করে রোপন করা হয়েছিল। তবে মূল্যবান এই খয়ের গাছ রোপনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা হয়নি। ঐ দুই বছরের আগেও বন বিভাগ খয়ের গাছের চারা রোপন করেছিল বলে জানা যায়।

এই এলাকার খয়ের গাছকে কাঁচামাল বিবেচনায় নিয়ে নাটোরের বনপাড়াতে এবং রাজশাহীর চারঘাটে গড়ে উঠেছে খয়ের উৎপাদনের কুটির শিল্প। নাটোরে এই শিল্পের কার্যক্রম সীমিত হয়ে আসলেও চারঘাটের খয়ের শিল্প অত্যন্ত জমজমাট।

নাটোর বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সত্যেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, খয়ের তৈরী ছাড়াও গাছের খুটি অত্যন্ত টেকসই বিধায় এই গাছের দাম তুলনামূলকভাবে অনেক বেশী। এছাড়া এই গাছ লাহ্মা চাষে উপযোগী বিধায় এর মাধ্যমে অর্গানিক রঞ্জক তৈরী সম্ভব। 

বাংলাদেশের প্রকৃতি ও দেশীয় প্রাণী নিয়ে কাজ করে সমাদৃত হয়েছে পক্ষীকুলের আশ্রয় ও খাদ্য নিশ্চিতকরণ প্রকল্প। এই প্রকল্পের সমন্বয়কারী যশোধন প্রামাণিক জানান, প্রকল্পের পক্ষ থেকে খয়ের গাছের চারা রোপনের জন্যে বন বিভাগ এবং চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনকে অনুরোধ করা হয়েছিল।

আখের জমিতে হিসেবে খয়ের গাছ থাকলে তা পাখীদের আশ্রয় ও পার্চিং বৃক্ষ হিসেবে খুবই উপযোগী। এরফলে সারের অপব্যবহার রোধ করে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারতেন। দুঃখের বিষয়, বন বিভাগ কিছু গাছ লাগালেও চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ গ্রহন করেনি।

পাশাপাশি, খয়ের গাছে লাহ্মা উৎপাদনের লক্ষ্যে কীটতত্ত্ব বিভাগ এবং লেদার রিসার্স ইন্সটিটিউটকে অনুরোধ জানানো হলেও এই দুটি বিভাগের কোন পদক্ষেপের কথা জানা যায়নি। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল- লাহ্মা দিয়ে গালা তৈরীর পাশাপাশি এটি অর্গানিক রঞ্জক হিসেবে খুবই মূল্যবান।

বস্ত্র শিল্প এবং চামড়া শিল্পে এই লাহ্মা সৃষ্ট রঞ্জক ব্যবহার করা হলে অর্গানিক বিবেচনায় তৈরী পোষাক ও চামড়ার পণ্য মূল্য অনেকগুনে বেড়ে যাবে। পাশাপাশি চামড়া প্রক্রিয়াকরণ কাজে ব্যবহারকৃত কেমিকেল দুষণের হাত থেকে রক্ষা পাবে আমাদের নদী আর আমরা বাঁচবো খয়ের গাছের নির্মল অক্সিজেন পেয়ে।