টাঙ্গাইল পৌর এলাকার কোন বাজারেই নেই জবাই খানা, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পৌরবাসী

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০১:৩৬ পিএম, শনিবার, ৯ নভেম্বর ২০১৯ | ৬৪১

টাঙ্গাইল পৌর এলাকার কোন বাজারেই পশু জবাইয়ের জন্য নির্ধারিত কোন জবাইখানার ব্যবস্থা নেই। ফলে মাংশ বিক্রেতারা নিজেদের মতো করে পশু জবাই করে বাজারে ওই মাংস বিক্রয় করছে।এর ফলে শহরের যত্রতত্র ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পশু জবাই করা হচ্ছে। জবাইয়ের আগে এসব পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করা হচ্ছে না নেই পশু সম্পদ বিভাগের কোন তদারকি। টাঙ্গাইল পৌর সভার তদারকি তাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে টাঙ্গাইল পৌর এলাকাবাসী।

অনুসন্ধান করে জানা যায়, ১৯৭৮ সালে তৎকালীন সেনাবাহিনী তাদের পশু জবাইয়ের জন্য টাঙ্গাইল স্টেডিয়ামের উত্তর-পশ্চিম কোনে একটি জবাই খানা তেরি করে। মির্জা বেলায়েত হোসনে নামে এক পৌর কর্মচারী তখন পশু জবাইয়ের দায়িত্বে ছিল। পরে  টাঙ্গাইল পৌর কতৃপক্ষ এটাকে তাদের জবাই খানার হিসেবে ব্যবহার শুরু করে।

টাঙ্গাইল জেলা ক্রীড়া সংস্থার জায়গায় জবাই খানাটি হওয়ায় ও স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করাতে,১৯৮৮ সালে জবাই খানাটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। 

ফলে পৌর কতৃপক্ষ একটি ছোট আকারের জবাই খানা শহরের পার্ক বাজারের মাংসের বাজারে পাশে স্থাপন করে। ২০১২ সালে জবাইখানাটি ভেঙ্গে উন্নয়নের উদ্যোগ নেয় পৌর কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু ভূমির মালিকানা নিয়ে পৌর কতৃপক্ষ ও  উপজেলা ভূমি অফিসের মধ্যে জটিলতা দেখা দেওয়ায় এর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তার পর থেকেই মাংস বিক্রেতারা যে যার মতো করে যত্রতত্র পশু জবাই করছেন। 

নিয়ম অনুসারে, পশু জবাই কার্যক্রম তদারকির দায়িত্ব পশু সম্পদ অধিদপ্তর এবং পৌরসভার স্যানেটারী বিভাগের। কিন্তু লোকবলের অভাবে পশু সম্পদ অধিদপ্তর জবাইয়ের আগে পরীক্ষার জন্য কোন ভেটেনারি চিকিৎসক পাঠান না।

পৌর কর্তৃপক্ষের দাবি, তাদের লোকজন প্রতিদিন পশু জবাইয়ের আগে তা দেখে আসেন। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি দিন সকালে শহরের পার্ক বাজার, বেবী স্ট্যান্ড বাজার, বটতলা বাজার, সাবালিয়া পৌর বাজারে সহ পৌর এলাকার বিভিন্ন বাজার  সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সেখানে মাংস বিক্রেতারা যে যার মতো পশু জবাই করছেন।

পৌর কতৃপক্ষ আবুল বাসার নামে একজকে নিযুক্ত করছে পশু জবাই করার জন্য । তার পক্ষে পৌর এলাকার সব বাজারে গিয়ে পশু জবাই করা সম্ভব হয়ে নয় । তাই যার যার সুবিধা মতো পশু জবাই করছে।

আর ষাঁড়, গাভী, ছাগল,খাশী এটা দেখে সিল মারছে পৌর সভার মাস্টার রোলের কর্মচারী মোঃ হাসমত আলী। । এ ছাড়া পার্ক বাজারে গরু ও খাশী জবাই এর জায়গার ব্যবধান খুবই অল্প। পশু সম্পদ দপ্তরের কাউকে উল্লেখিত বাজারে গুলোতে এ সময় পাওয়া যায়নি।

বটতলা বাজারের মাংস বিক্রেতা  মোঃ গজনবী মিঞা ও মোঃ কাদের জানান, তারা প্রতিদিন প্যাড়াডাইস পাড়ায় নদীর পাড়ে পশু জবাই করে ভ্যানে করে সকালে বটতলা বাজারে মাংস নিয়ে আসেন। পৌর কতৃপক্ষের কেউ এই সব পশু জবাইয়ে তদারকি করে না বলে তারা আরো জানান। 

পার্ক বাজারের মাংশ ব্যবসায়ী  খোকা মিঞা বলেন, প্রতিদিন  সকালে দোকানের সামনে খালি জায়গায় পশু জবাই করে তার পর মাংস বিক্রি করি। কোন  কোন দিন পৌর সভার একজন কর্মচারী এসে ষাঁড়  না গাভী সেই সিল মেরে চলে যায়।   

পার্ক বাজারের মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক শাহজাহান মিয়া  সাজু জানান, ২০১১ সালে পৌরসভা পার্ক বাজারের জবাইখানাটি ভাঙ্গার পর থেকে তারা তাদের দোকানের আশেপাশে পশু জবাই করছেন।

সম্প্রতি পৌর মেয়র জামিলুর রহমান মিরন ও  সহকারী কমিশনার(ভুমি) উপমা ফারিসা পার্ক বাজার  এর জবাই খানার জায়গা পরিদর্শন করে গেছেন। আমরা তাদের কাছে দাবী জানিয়েছি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পার্ক বাজারের জবাই খানাটি তৈরি করে দেবার জন্য। 

পার্ক বাজারে গরুর মাংস কিনতে আসা শহরের কলেজ পাড়ার মোঃ সুমন বলেন,  যেহেতু পশু জবাইয়ের আগে পরীক্ষার কোন ব্যবস্থা নেই। তাই সম্পূর্ণ বিশ্বাসের উপর মাংস কিনতে হয়। বাজারে নিরাপদ মাংস নিশ্চিত করতে আধুনিক পশু জবাই কেন্দ্র নির্মান এবং সেখানে জবাইয়ের আগে প্রতিটি পশু পরীক্ষা নিরিক্ষার ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। 

একই বাজারে খাশীর মাংস কিনতে কৃষ্ণ রায় জানায়, আমি জানি না কিভাবে খাসী জবাই করা হয়েছে। ওটা খাশী না ছাগী সেটাও জানি না। এ ছাড়া গরুর মাংস আর খাশীর মাংস পাশাপাশি বিক্রয় করা হয়, যে কারনে মাংস কিনে তৃপ্তি পাই না। খাশীর মাংস একটা আলাদা জায়গায় বিক্রয় করলে মনে হয় ভালো হতো। আশা করি, কতৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবে। 

এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল পৌরসভার স্যানেটারী পরিদর্শক খ.আব্দুল কাদের সিরাজুল ইসলাম জানান, পৌরসভার কর্মীরা কোন অসুস্থ্য বা রোগাক্রান্ত গরু জবাই করছে কি না সে বিষয়টি দেখেন।

এছাড়াও ভেড়া বা ছাগি, খাসি হিসেবে বিক্রির জন্য জবাই করছে কিনা তাও দেখেন। তবে তাদের পরীক্ষা করে দেখার কোন ব্যবস্থা নেই। খালি চোখে দেখেই রোগাক্রান্ত কি না তা পর্যবেক্ষন করা হয়। 

খোলা জায়গা পশু জবাইয়ের ক্ষতিকর দিক প্রসঙ্গে টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ শরীফ হোসেন বলেন, খোলা জায়গায় পশু জবাই করা হলে, জবাই কৃত পশুর রক্ত থেকে ব্রুসোলেসিস ও অ্যানথ্রাক্স এর মতো ছোঁয়াচে রোগ ছড়াতে পারে। এই রোগ  ছোঁয়াচে। যে পশু জবাই করে সে ও যারা ওই মাংস খাবে তারা  রোগাক্রান্ত হতে পারে।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশে উত্তর বঙ্গে আ্যানথ্রাক্স রোগ দেখা গেছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব টাঙ্গাইল পৌর কতৃপক্ষর জবাই খানা তৈরি করার উদ্যোগ  নেয়া উচিৎ।

জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ড. মোঃ আবু সাঈদ সরকার জানান, পশু জবাই করার আগে তা রোগাক্রান্ত কি না ভেটেনারি চিকিৎসক দিয়ে তা পরীক্ষা করে নেয়ার বিধান রয়েছে।

কিন্তু লোকবলের অভাবে পশু সম্পদ বিভাগ থেকে ভেটেনারি চিকিৎসক পাঠানো সম্ভব হয় না।এলডিপি প্রকল্পের আওতায় একটি অত্যাধুনিক স্লটার হাউজ (জবাই খানা) নির্মান করার প্রস্তাব  প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। জবাইখানা নির্মানের জন্য জায়গা নিধারন বিষয়ক চুক্তি খুব শীঘ্রই টাঙ্গাইল পৌর  মেয়রের সাথে করা হবে,  বলে তিনি আরো জানান ।

এ প্রসঙ্গেটাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র জামিলুর রহমান বলেন, গত এক বছর যাবত জেলা প্রশাসন সাথে জবাই খানায় জায়গার বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করছি। 

ইতিমধ্যে  টাঙ্গাইল পৌর এলাকার বাজার গুলোর জন্য একটি অত্যাধুনিক জবাই খানা তৈরির জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আশা করি, অতি দ্রুতই টাঙ্গাইল বাসীকে  একটি জবাইখানা উপহার দিতে পারবো।