জীবন দিয়ে নয়, রক্ত দিয়ে বাঁচাবো জীবন

রক্তদান জীবন দান-তারই উদ্দ্যেশে ব্লাড হেল্প গ্রুপের যাত্রা শুরু

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: ১১:২১ এএম, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০১৯ | ৭৫৮

মানুষকে ভালোবাসতে ভুলে যেও না । রক্ত দান করা যেনো আমাদের নেশা। আর রক্ত নিয়ে কাজ করা আমাদের নেশায় পরিনত হয়েছে। যদি কোন লোকের রক্ত দরকার হয় তখন যদি জানতে পারি তখন সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করি আমরা ।নিজে নিজে কিছু না করতে পারলেও অন্যকে সহযোগিতার মাধ্যমে এক ধরনের মজা পাই। 

যদি আমরা  রক্ত না দিতে পারি তাহলে অবশ্যই অন্য জনের মাধ্যমে রক্ত ব্যবস্থা করার চেষ্টা করি। আমরা একটু সহযোগিতার জন্য যদি একটি মানুষের জীবন বেঁচে যায় তাহলে কার না ভালো লাগে। এভাবেই কথাগুলো বলছিল ব্লাড হেল্প গ্রুপের সদস্যরা।

তারা আরোও বলেন নিজে একা সব কাজ করা সম্ভব না বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্লাড হেল্প নামে একটি গ্রুপ তৈরি করি আমরা । যার মাধ্যমে আমাদের মত কিছু রক্ত যোদ্ধার সাথে পথ চলা শুরু হয়।গরম পড়তে না পড়তেই রক্তের সংকট দেখা দেয়। সেই সংকটের কিছুটা অভাব মেটাতে রক্তদান করার ব্যবস্থা করি আমরা ।

রক্তের জন্য অবশ্যই যোগাযোগ করতে পারেন – ব্লাড হেল্প গ্রুপের পক্ষে – এম শামসুল আলম প্রিন্স , মো :মিজানুর রহমান (ভিলেন) (ও +), সুমি আক্তার (ও+) , মো: শাকিল আহমেদ (ও+) , শামীম রেজা, আসমা আক্তার আলো, রিফাত ভূঁইয়া, সুজন আহমেদ, রিদওয়ানুল হক, লুবনা আরোবী, সাগর হোসাইন, জাহাঙ্গীর আলম, রিফাত হোসেন, আরিয়ান সানি, রোকসানা আক্তার রিয়া, কাজল, ইব্রাহিম জামান সুমন, জুলেখা আক্তার জুলি, আলমগীর আহমেদ।

রক্তদানের সুবিধা :

১. প্রতি ৩ মাস অন্তর রক্ত দিলে দেহে নতুন BLOOD CELL সৃষ্টির প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
২. দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকগুন বেড়ে যায়।
৩. নিয়মিত রক্তদানে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে বলে হৃদপিন্ড বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
৪. স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে আপনি জানতে পারেন আপনার শরীর রক্তবাহিত মারাত্মক রোগ যেমন-হেপাটাইটিস-বি, এইডস, সিফিলিস ইত্যাদির জীবাণু বহন করছে কিনা।
৫. স্বেচ্ছায় রক্তদানে মানসিক প্রশান্তি আসে।
৬. রক্তদানের মাধ্যমে একটি জীবন বাঁচানো পৃথিবীর সর্বোচ্চ সেবার অর্ন্তভুক্ত।

 রক্তদানের আগে ও পরে যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে:

যাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ১২.৫ এর কম নয় এবং ওজন ৪৫ কেজির উপরে তারা প্রতি ৩ মাস অন্তর অন্তর রক্ত দান করতে পারেন। তবে খেয়াল রাখা প্রয়োজন যে, রক্তদানের সময় শরীরের তাপমাত্রা ও রক্তচাপ অবশ্যই স্বাভাবিক থাকা আবশ্যক।

এছাড়াও রক্তদানের আরও কিছু ছোট ছোট বিষয় খেয়াল রাখতে হয়। যেমন- রক্তদানের আগে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দাতা কোন এন্টিবায়োটিক ওষুধ গ্রহণ করেছেন কিনা, অথবা তিনি জন্ডিস, সিফিলিস, গনোরিয়া, এইডসের মত রোগে ভুগছেন কিনা।খালি পেটে বা ভরপেটে কখনোই রক্ত দেয়া ঠিক নয়। তাই রক্তদানের আগে অবশ্যই হালকা কোন খাবার খেয়ে নেয়া উচিৎ।

রক্তদাতাকে অবশ্যই শারীরিকভাবে সুস্থ হতে হবে। অসুস্থ অবস্থায় কখনো রক্ত দেয়া যাবে না। শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে রক্ত দিলে আপনি নিজেই অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। কোনো সুস্থ ব্যক্তি যদি রক্ত দিতে চান, তবে তার বয়স অবশ্যই ১৮ বছর হতে হবে। ১৮ বছরের নিজে কোনো ব্যক্তি রক্তদান করতে পারবেন না। 

রক্তদানের আগে রক্তদাতার ওজন ও বয়স যাচাই করে নিতে হবে। কোনো ব্যক্তির ওজন যদি ৫০ কেজির নিচে হয়, তবে ওই ব্যক্তি রক্ত দিতে পারবেন না।এছাড়া রক্তদাতার রক্তচাপের দিকে লক্ষ্য রাখা দরকার। খুব বেশি বা খুব কম কোনোটিই রক্তদানের ক্ষেত্রে সহায়ক নয়।

নারীরা পিরিয়ড চলাকালীন বা গর্ভাবস্থায় রক্তদান করতে পারবেন না। কারণ এই সময় রক্তদান নারীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ অ্যান্টিবায়োটিক সেবনরত অবস্থায় কোনো ব্যক্তি রক্তদান করতে পারবেন না। এছাড়া রক্তদানের কাছাকাছি সময়ে কোনও বড় দুর্ঘটনা বা অস্ত্রোপচার হয়ে থাকলে রক্তদান না করা বাঞ্ছনীয় রক্তের হিমোগ্লোবিন ১১-এর নিচে হলে রক্ত দেয়া ঠিক নয়। এতে করে হার্টবিট বেড়ে যাওয়া, ক্লান্ত লাগা, চোখে ঝাপসা দেখা, মাথা ঘোরাসহ অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারেন।

রক্তদানের পরে কিছু বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। এক ব্যাগ রক্তদানের পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়া দরকার। রক্তদানের পর দুই গ্লাস পানি বা জুস খেলে রক্তের জলীয় অংশটুকু পূরণ হয়ে যায়। এরপর পর্যাপ্ত পানি ও জুস পান করতে হবে, সেই সঙ্গে  প্রয়োজন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম । বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর খাবার যেমন- কচু, ডিম, দুধ, ফলমূল খেতে পারেন। বেশি দূর্বল হয়ে েপড়লে ডাক্তরের পরামর্শ নিতে হবে। 

রক্তের গ্রুপ  :

রক্তদান করতে হলে বা নিজের নানান বিপদের কথা চিন্তা করে রক্তের গ্রুপ জানাটা সবার জন্য অত্যন্ত জরুরি। রক্তের গ্রুপগুলো হলো . এবি নেগেটিভ . এবি পজেটিভ . এ নেগেটিভ . এ পজেটিভ . ও নেগেটিভ . ও পজেটিভ . বি নেগেটিভ . বি পজেটিভ।

রক্তের গ্রুপ নির্ণয় ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিঃ

1. কাচের স্লাইড 
2. কটন বা তুলা
3. সিপরিট
4. ল্যান্সেট ( Optional)
5. সাদা কাপড় বা সাদা কাগজ
6. গ্লাস মার্কাস ( Optional)
7. নরমাল স্যালাইন ( Optional)
8. মাইক্রোস্কোপ ( Optional) ও
9. নিডিল
10. ঝুড়ি ( ব্যবহৃত নিডিল, কটন সহ অপ্রয়োজনীয় ময়লা রাখার জন্য) প্রয়োজনীয় সংখ্যক।
11. পানি সহ গামলা বা পাত্র ( ব্লাড গ্রুপিং এর ব্যবহৃত স্লাইড রাখার জন্য) প্রয়োজনীয় সংখ্যক।
12. স্যাভলন
13. গ্লাভস
14. লাল ও কালো কালির কলম

রাসায়নিক দ্রব্যাদিঃ সেরাম Anti-A,
সেরাম Anti-B, সেরাম Anti-D

পদ্ধতিঃ
রক্ত গ্রুপ র্নিণয় টেবিলঃ রক্তগ্রুপ নির্ণয় টেবিল এর উপরে সাদা কাপড় বা সাদা কাগজ দিতে হবে যেন গ্রুপিং নির্ণয়ে সুবিধা হয়। প্রয়োজনীয় উপকরন সঠিক ভাবে সাজিয়ে নিতে হবে। কয়জন পিকার এবং কয়জন টেকনিশিয়ান তা অনুসারে টেবিল সাজাতে হবে।

স্লাাইডে রক্ত গ্রহনঃ রক্ত গ্রুপ জানতে আগ্রহীর কাছ থেকে গ্রুপ নির্ণয়ের জন্য যিনি রক্ত সংগ্রহ করেন তাকে আমরা পিকার বলি। পিকার সর্বপ্রথম নিজ দুই হাত সম্পূর্ণ ভাবে স্পিরিট দ্বারা জীবানু মুক্ত করে নিবে এবং প্রয়োজনে হ্যান্ডগ্লাভস ব্যবহার করবে। পিকার পরিস্কার জীবানু মুক্ত একটি স্লাইড নিবেন। প্রথমে রক্তগ্রুপ নির্ধারণযোগ্য ব্যক্তির হাতের আঙুলের ডগা (তুলাতে স্পিরিট লাগিয়ে) স্পিরিট দ্বারা জীবানুমুক্ত করতে হবে। যে আঙুল থেকে রক্ত সংগ্রহ করা হবে সেটি খুব সুন্দর ভাবে ধরতে হবে। তার পর নতুন জীবানুমুক্ত একটি নিডিল দিয়ে আঙুলের ডগায় পিক করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে পিক করা যেন খুব সাবধানে হয় । খুব জোরে বা ব্যাথা লাগতে পারে এমন ভাবে পিক করা যাবে না । কথা বলে তাকে ব্যস্ত রাখতে হবে যেন ব্যাথা খুব বেশী অনুভব করতে না পারে।  এরপর স্লাইডটিকে সমান তিনটি অংশে কল্পনা করে প্রতিটি ভাগের মধ্য বরাবর প্রয়োজন মতো তিন ফোটা রক্ত নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে কোন ভাবেই যেন আঙুল স্লাইডে স্পর্শ না করে। খেয়াল রাখতে হবে যেন খুব বেশী পরিমান রক্ত প্রতি ফোটায় না পড়ে। এ ব্যাপারে টেকনিশিয়ান এর পরামর্শ নিতে হবে। রক্ত স্লাইডে সংগ্রহের পরে উক্ত ব্যক্তির টোকেন সহ স্লাইডটি টেকনিশিয়ান এর দিকে সাবধানে এগিয়ে দিতে হবে।

গ্রুপিংঃ

যিনি রক্তের ফোটার সঙ্গে রি- এজেন্ট মিশ্রিত করে রেজাল্ট প্রদান করেন তিনি টেকনিশিয়ান।

স্লাইডের তিন ফোটা রক্তের সর্ববামে প্রথম ফোঁটা রক্তের সাথে Anti-A (নীল রঙের), মাঝের ফোঁটার সাথে Anti-B ( হলুদ রঙের) এবং সর্বডানে তৃতীয় ফোঁটা রক্তের সাথে Anti-D(বর্নহীন) যোগ করি । রি-এজেন্ট এর ফোঁটাগুলো খুব সাবধানে নিতে হবে যেন রি-এজেন্ট এর ড্রপার রক্তের ফোঁটার সাথে কোন ভাবেই না লাগে, যদি লেগে যায় তাহলে এটি বোতলে রি-এজেন্টকে নষ্ট করে দিবে। এরপর রি-এজেন্ট এর সহিত রক্ত মিশানোর জন্য পূর্বে ব্যবহৃত নিডিল খাপ সহ সাবধানে ব্যবহার করতে পারি। ব্যবহারের সময় নিডিল এর তিন অংশ দিয়ে তিন ফোঁটা রক্তের সাথে রি-এজেন্ট মিশ্রিত করতে হবে। এর পর স্লাইডটিকে সাবধানে ধীরে ধীরে নাড়তে হবে।

খেয়াল রাখতে হবে নাড়ানোর ফলে যেন কোন ফোঁটা অন্য ফোঁটার সাথে না মিশে। কিছুক্ষণ পর দেখা যাবে রক্তের সাথে সেরামের বা রি-এজেন্ট এর বিক্রিয়ায় অ্যাগ্লুটিনেসন (agglutination, জট পাকানো ) হয়েছে কিনা এবং তা দেখে এর ফলাফল র্নিণয় করতে হবে। = অ্যাগ্লুটিনেসন হয়েছে ( জট পাকানো ); =অ্যাগ্লুটিনেসন হয়নি( জট পাকায় নাই )।